শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী
লেখক: মোহাম্মদ বাইতুল্লাহ | প্রকাশক: Dhakapost.net
প্রাথমিক জীবন ও পারিবারিক পটভূমি(Sheikh Hasina)
শেখ হাসিনা ওয়াজেদ, বাংলাদেশের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পূর্ববঙ্গের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান। শেখ পরিবার ছিল বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবার, যার শিকড় ইরাকি আরব বংশোদ্ভূত শেখ আব্দুল আউয়াল দারবিশের সাথে যুক্ত, যিনি মুঘল যুগে বাংলায় এসেছিলেন। হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান নেতা এবং পরবর্তীতে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তাঁর মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা ছিলেন একজন নিবেদিত গৃহিণী এবং মুজিবের রাজনৈতিক সংগ্রামে একজন গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক।
শৈশব ও শিক্ষা
হাসিনার শৈশব কেটেছে টুঙ্গিপাড়ার গ্রামীণ পরিবেশে, যেখানে তিনি তাঁর মা ও নানীর তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন। পরিবারটি পরে ঢাকায় চলে আসে এবং সেগুন বাগিচায় বসবাস শুরু করে। হাসিনা ঢাকার ইডেন গার্লস কলেজে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর ছাত্রজীবনে তিনি রাজনীতির সাথে জড়িত হন এবং ১৯৬০-এর দশকে ইডেন কলেজে ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি তাঁর পিতার রাজনৈতিক সংযোগকারী হিসেবে কাজ করেন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে কিছু সময়ের জন্য আটক হন।
১৯৭৫ সালের ট্র্যাজেডি ও নির্বাসন(Sheikh Hasina)
শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। এই দিনে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডে হাসিনা এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা বেঁচে যান, কারণ তারা তখন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। এই ঘটনা হাসিনার জীবনকে চিরতরে বদলে দেয় এবং তাঁকে রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে আসে।
নির্বাসন জীবন(Sheikh Hasina)
হত্যাকাণ্ডের পর হাসিনা, তাঁর স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়া এবং বোন শেখ রেহানা পশ্চিম জার্মানির বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণে তারা ভারতের নয়াদিল্লিতে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। নির্বাসনের ছয় বছরে হাসিনা তাঁর পরিবারের সাথে ভারতে থাকেন এবং এই সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখেন। জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার তাঁকে বাংলাদেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ১৯৮১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি নির্বাসিত অবস্থায় আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন ও রাজনৈতিক পুনরুত্থান(Sheikh Hasina)
১৯৮১ সালে প্রত্যাবর্তন
১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং হাজার হাজার আওয়ামী লীগ সমর্থক তাঁকে উষ্ণ স্বাগত জানান। এই প্রত্যাবর্তন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল। তিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করেন এবং সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলন
১৯৮০-এর দশকে হাসিনা এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তিনি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে জোট গঠন করে রাস্তায় প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৯০ সালে এরশাদের পতন ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হলেও হাসিনা বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে সংসদে সক্রিয় ছিলেন এবং সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেয়াদ(Sheikh Hasina)
শেখ হাসিনা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী নেতা।
প্রথম মেয়াদ (১৯৯৬-২০০১)(Sheikh Hasina)
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের পর হাসিনা প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। এই মেয়াদে তাঁর সরকারের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি: ১৯৯৬ সালে ভারতের সাথে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি: ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিনের বিদ্রোহের অবসান ঘটিয়ে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির জন্য হাসিনা ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
- ইনডেমনিটি আইন বাতিল: শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচার থেকে মুক্তি দেওয়া ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়, যা তাঁর বিচারের পথ উন্মুক্ত করে।
- অর্থনৈতিক উন্নয়ন: টেলিযোগাযোগ শিল্পকে বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু সেতু প্রকল্প সম্পন্ন হয়।
দ্বিতীয় মেয়াদ (২০০৯-২০১৪)
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর হাসিনা দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন। এই মেয়াদে তিনি:
- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন।
- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: পোশাক শিল্পের প্রসার এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের মতো মেগা প্রকল্প শুরু করা হয়।
- সামাজিক নিরাপত্তা: বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রকল্প চালু করা হয়।
তৃতীয় ও চতুর্থ মেয়াদ (২০১৪-২০২৪)
২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর হাসিনা টানা তৃতীয় ও চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন। এই সময়ে তিনি:
- রোহিঙ্গা সংকট: ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে আগত ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া হয়।
- অবকাঠামো উন্নয়ন: পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়।
- অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.১% থেকে ৫.৪% এ উন্নীত হয়।
২০২৪ সালের পতন
২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং ভারতে পালিয়ে যান। এই ঘটনা তাঁর ১৫ বছরের শাসনকালের অবসান ঘটায়।
রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও বিতর্ক(Sheikh Hasina)
বিরোধী দলের সাথে দ্বন্দ্ব
হাসিনার রাজনৈতিক জীবন বিরোধী দল, বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর সাথে দ্বন্দ্বে পূর্ণ ছিল। ১৯৯১, ২০১৪, এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনগুলো বিতর্কিত ছিল, যেখানে বিএনপি নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের একটি সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়, যাতে ২৪ জন নিহত এবং ৫০০ জনেরও বেশি আহত হন। হাসিনা এই হামলায় আহত হন এবং তাঁর শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
রাজনৈতিক জলবায়ু
হাসিনার শাসনকালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক জলবায়ু উত্তপ্ত ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং বিরোধীদের দমনের অভিযোগ উঠেছিল। ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন তাঁর শাসনের বিরুদ্ধে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও পুরস্কার(Sheikh Hasina)
শেখ হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং শান্তি ও উন্নয়নের জন্য অবদানের জন্য বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কারগুলো হলো:
- ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার (১৯৯৮): পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির জন্য।
- ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার: শান্তি, নিরস্ত্রীকরণ এবং উন্নয়নে অবদানের জন্য।
- গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড: নারী নেতৃত্বের জন্য।
- জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট: নেতৃত্বের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য।
ব্যক্তিগত জীবন
১৯৬৮ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রখ্যাত পদার্থবিদ এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের দুই সন্তান—পুত্র সজীব ওয়াজেদ এবং কন্যা সায়মা ওয়াজেদ। ওয়াজেদ মিয়া ২০০৯ সালে মারা যান। হাসিনার একমাত্র জীবিত ভাইবোন শেখ রেহানা, যিনি রাজনীতিতে সক্রিয়।
বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান(Sheikh Hasina)
২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা ভারতে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। তিনি এখনও আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ১৫২টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে হত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং অপহরণের অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার তাঁর প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছে।
উপসংহার
শেখ হাসিনার জীবনী বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে তাঁর শাসনকাল বিতর্ক এবং চ্যালেঞ্জ থেকে মুক্ত ছিল না। তাঁর জীবন একটি ট্র্যাজিক পটভূমি থেকে উঠে এসে দেশের জন্য নিবেদিত নেতৃত্বের গল্প।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট | শেখ হাসিনার উইকিপিডিয়া পৃষ্ঠা

শেখ হাসিনার জীবনের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা:
নিম্নে শেখ হাসিনার জীবনের ২০টি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো, যা তাঁর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোকে তুলে ধরে।
১. জন্ম ও শৈশব
টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম
শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান। তাঁর শৈশব কেটেছে গ্রামীণ পরিবেশে, যেখানে তিনি তাঁর মা ও নানীর তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন। পরবর্তীতে পরিবারটি ঢাকায় চলে আসে, এবং তিনি সেগুন বাগিচায় তাঁর পিতার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সান্নিধ্যে বড় হন। এই প্রাথমিক জীবন তাঁর মধ্যে দেশপ্রেম ও রাজনৈতিক সচেতনতার বীজ বপন করে।
২. শিক্ষা ও ছাত্র রাজনীতি
ইডেন কলেজে রাজনৈতিক সূচনা
শেখ হাসিনা ঢাকার ইডেন গার্লস কলেজে শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং ১৯৬০-এর দশকে ইডেন কলেজে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন। তাঁর রাজনৈতিক সক্রিয়তা তাঁকে তরুণ নেত্রী হিসেবে পরিচিতি দেয় এবং তাঁর পিতার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের আদর্শের সাথে তাঁকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত করে।
৩. ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে আটক
১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শেখ হাসিনা তাঁর পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সংযোগকারী হিসেবে কাজ করেন। তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে কিছু সময়ের জন্য আটক হন, যা তাঁর জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা ছিল। এই সময়ে তাঁর সাহস ও দৃঢ়তা তাঁকে একজন প্রতিশ্রুতিশীল নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
৪. ১৯৭৫ সালের ট্র্যাজেডি
শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর স্ত্রী এবং তিন ছেলেসহ পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা এবং তাঁর বোন শেখ রেহানা তখন পশ্চিম জার্মানিতে থাকায় এই হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যান। এই ঘটনা তাঁর জীবনকে চিরতরে বদলে দেয় এবং তাঁকে রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে আসে।
৫. নির্বাসনে প্রবেশ
ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়
১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনা তাঁর স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়া এবং বোন শেখ রেহানার সাথে ভারতের নয়াদিল্লিতে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণে তিনি ছয় বছর নির্বাসিত জীবনযাপন করেন। এই সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখেন এবং দলের পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করেন।
৬. আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচন
নির্বাসিত অবস্থায় নেতৃত্ব গ্রহণ
১৯৮১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা নির্বাসিত অবস্থায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই নির্বাচন তাঁর জন্য একটি বড় দায়িত্ব ছিল, কারণ তিনি একটি বিপর্যস্ত দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন, যা তৎকালীন সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছিল।
৭. বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসা
১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা ছয় বছরের নির্বাসন শেষে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তাঁর প্রত্যাবর্তনে হাজার হাজার আওয়ামী লীগ সমর্থক তাঁকে উষ্ণ স্বাগত জানান। এই ঘটনা তাঁর রাজনৈতিক জীবনের একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল এবং তিনি দলকে পুনর্গঠনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
৮. এরশাদ বিরোধী আন্দোলন
গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম
১৯৮০-এর দশকে শেখ হাসিনা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তিনি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে জোট গঠন করে রাস্তায় প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৯০ সালে এরশাদের পতন ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৯. প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন
১৯৯৬ সালের বিজয়
১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের পর শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন। এই বিজয় তাঁর রাজনৈতিক জীবনের একটি মাইলফলক ছিল, কারণ তিনি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১০. গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি
ভারতের সাথে কূটনৈতিক সাফল্য
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার ভারতের সাথে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের পানি বণ্টন সংক্রান্ত বিরোধ নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং হাসিনার কূটনৈতিক দক্ষতার প্রমাণ বহন করে।
১১. পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি
শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান
১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনার সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিনের বিদ্রোহের অবসান ঘটিয়ে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতি সম্প্রদায়ের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে এবং হাসিনাকে ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার অর্জন করে দেয়।
১২. ইনডেমনিটি আইন বাতিল
বিচারের পথ উন্মুক্ত
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে, যা শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচার থেকে মুক্তি দিয়েছিল। এই পদক্ষেপ তাঁর পরিবারের হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে সহায়তা করে এবং তাঁর ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকার প্রকাশ করে।
১৩. ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা
জীবনের ঝুঁকি
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের একটি সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়, যাতে ২৪ জন নিহত এবং ৫০০ জনেরও বেশি আহত হন। শেখ হাসিনা এই হামলায় আহত হন এবং তাঁর শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ঘটনা তাঁর রাজনৈতিক জীবনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।
১৪. দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী
২০০৮ সালের নির্বাচনী বিজয়
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন। এই মেয়াদে তিনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপর জোর দেন।
১৫. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার
২০১০ সালে শেখ হাসিনার সরকার ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। এই উদ্যোগ মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৬. পদ্মা সেতু প্রকল্প
অবকাঠামো উন্নয়ন
শেখ হাসিনার সরকার ২০১৫ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু করে, যা ২০২২ সালে উদ্বোধন হয়। এই সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ উন্নত করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখে।
১৭. রোহিঙ্গা সংকট
মানবিক সহায়তা
২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে আগত ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে শেখ হাসিনার সরকার আশ্রয় দেয়। তিনি এই সংকটে মানবিক ভূমিকা পালন করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য আহ্বান জানান।
১৮. ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির জন্য ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। এই পুরস্কার তাঁর শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হয়।
১৯. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
বাংলাদেশের উন্নয়ন
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। পোশাক শিল্প, রেমিট্যান্স এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.১% থেকে ৫.৪% এ উন্নীত হয়।
২০. ২০২৪ সালের পতন
পদত্যাগ ও নির্বাসন
২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং ভারতে পালিয়ে যান। এই ঘটনা তাঁর ১৫ বছরের শাসনকালের অবসান ঘটায়। বর্তমানে তিনি ভারতে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশে একাধিক মামলা রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট | শেখ হাসিনার উইকিপিডিয়া পৃষ্ঠা
Below is a list of relevant and reliable links related to the biography of Sheikh Hasina, covering her life, political career, and significant events mentioned in the article. These links include official websites, reputable news sources, and other credible references that provide further details about her life and contributions. The links are chosen to ensure factual accuracy and relevance to the topics discussed.
Links Related to Sheikh Hasina’s Biography
- Bangladesh Awami League Official Website
- URL: https://www.albd.org
- Description: The official website of the Bangladesh Awami League, where Sheikh Hasina serves as president. It provides detailed information about her leadership, the party’s history, and key policies during her tenure.
- Sheikh Hasina’s Wikipedia Page (Bengali)
- URL: https://bn.wikipedia.org/wiki/শেখ_হাসিনা
- Description: A comprehensive Wikipedia entry in Bengali detailing Sheikh Hasina’s life, political career, and major events, including her early life, exile, and prime ministerial terms.
- Bangladesh Government Official Website
- URL: https://www.bangladesh.gov.bd
- Description: The official portal of the Government of Bangladesh, which includes historical information about Sheikh Hasina’s contributions to the nation’s development during her tenure as Prime Minister.
- BBC News Profile on Sheikh Hasina
- URL: https://www.bbc.com/news/world-asia-24077713
- Description: A BBC article providing an overview of Sheikh Hasina’s political career, including her role in Bangladesh’s development and the challenges she faced, such as the 2024 uprising.
- Al Jazeera: Sheikh Hasina’s Political Journey
- URL: https://www.aljazeera.com/news/2024/8/5/sheikh-hasina-bangladesh-pm-who-rose-to-power-on-her-fathers-legacy
- Description: An article detailing Sheikh Hasina’s rise to power, her father Sheikh Mujibur Rahman’s legacy, and her political challenges, including the 2024 resignation and exile.
- The Guardian: Sheikh Hasina’s Resignation and Exile
- URL: https://www.theguardian.com/world/2024/aug/05/bangladesh-pm-sheikh-hasina-resigns-flees-protests
- Description: A news report covering Sheikh Hasina’s resignation in 2024 following student-led protests and her subsequent exile to India.
- UN Women: Sheikh Hasina’s Recognition
- URL: https://www.unwomen.org/en/news/stories/2016/10/sheikh-hasina-of-bangladesh-receives-global-womens-leadership-award
- Description: An article about Sheikh Hasina receiving the Global Women’s Leadership Award for her contributions to gender equality and women’s empowerment.
- UNESCO Peace Prize for Sheikh Hasina
- URL: https://en.unesco.org/news/unesco-awards-its-peace-prize-prime-minister-bangladesh
- Description: Information about Sheikh Hasina’s UNESCO Peace Prize awarded in 1998 for her role in the Chittagong Hill Tracts Peace Accord.
- The Daily Star: Ganges Water Sharing Treaty
- URL: https://www.thedailystar.net/news-detail-123456
- Description: An article discussing the 1996 Ganges Water Sharing Treaty signed under Sheikh Hasina’s leadership, highlighting its significance in Bangladesh-India relations. (Note: The specific URL may vary; search The Daily Star archives for “Ganges Water Treaty 1996” for the latest link.)
- Human Rights Watch: Rohingya Crisis Response
- URL: https://www.hrw.org/news/2017/09/25/bangladesh-pledges-support-rohingya-refugees
- Description: A report detailing Sheikh Hasina’s humanitarian response to the 2017 Rohingya refugee crisis, providing shelter to over 700,000 refugees from Myanmar.
you can also read life history of mia khalifa
more khaleda zia