মনিষীদের জীবনী

শাকিব আল হাসান(Shakib Al Hasan): বাংলাদেশ ক্রিকেটের কিংবদন্তি

লেখক: মোহাম্মদ বাইতুল্লাহ | প্রকাশক: Dhakapost.net

প্রাথমিক জীবন ও পটভূমি(Shakib Al Hasan)

শাকিব আল হাসান ১৯৮৭ সালের ২৪ মার্চ বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের মাগুরা জেলার শিবপুর গ্রামে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা খোন্দকার মাসরুর রেজা ছিলেন একজন স্থানীয় ফুটবলার, যিনি মাগুরার ক্লাব ফুটবলে পরিচিত ছিলেন। তার মা শিরিন রেজা ছিলেন গৃহিণী, যিনি শাকিবের শৈশবের যত্ন নিতেন এবং তাকে খেলাধুলায় উৎসাহ দিতেন। শাকিবের একমাত্র বোন জান্নাতুল ফেরদৌস রিতু, যিনি তার শৈশবের খেলার সঙ্গী ছিলেন। শাকিবের শৈশব গ্রামীণ পরিবেশে কেটেছে, যেখানে তিনি বন্ধুদের সাথে রাস্তায় এবং পাড়ার মাঠে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলতেন।

শাকিবের ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ জন্মায় ১০ বছর বয়সে, যখন তিনি স্থানীয় টেপ-বল ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। তার বন্ধুরা তাকে “ময়না” ডাকনামে ডাকত, তার দ্রুতগতির বোলিং এবং চটপটে ফিল্ডিংয়ের জন্য। তিনি মাগুরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন, যেখানে তিনি স্কুলের ক্রিকেট দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। স্থানীয় টুর্নামেন্টে একটি ম্যাচে প্রথম বলে উইকেট নেওয়ার পর তার প্রতিভা স্থানীয় কোচদের নজরে আসে। এই ঘটনা তাকে ক্রিকেটে গুরুত্ব সহকারে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করে।

২০০২ সালে শাকিব বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নেন। বিকেএসপিতে তার বাঁ-হাতি স্পিন বোলিং এবং আক্রমণাত্মক ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিনি বিকেএসপি থেকে ফিরে এসে ইসলামপুর ক্লাবে যোগ দেন, যেখানে তিনি ২০০৪ সালে প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকের পথ প্রশস্ত করেন। শাকিব পরে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি) থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এই শিক্ষাগত যোগ্যতা তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পাশাপাশি তার বুদ্ধিবৃত্তিক দিকটিকে তুলে ধরে।

শাকিবের প্রাথমিক জীবনে তার পরিবারের সমর্থন ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তার বাবা তাকে ক্রীড়াক্ষেত্রে উৎসাহ দিতেন, এবং তার মা নিশ্চিত করতেন যে তিনি পড়াশোনা ও খেলাধুলার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করেন। শাকিবের শৈশবের বন্ধুরা প্রায়ই স্মরণ করেন যে তিনি সবসময় মাঠে নেতৃত্ব দিতেন এবং তার দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতেন। এই প্রাথমিক অভিজ্ঞতা তার ভবিষ্যৎ ক্রিকেট ক্যারিয়ারে নেতৃত্বের গুণাবলী গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

Shakib Al Hasan
Shakib Al Hasan

ঘরোয়া ক্রিকেট ক্যারিয়ার(Shakib Al Hasan)

শাকিব আল হাসান ২০০৪ সালে খুলনা বিভাগের হয়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগে (এনসিএল) প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক করেন। তার প্রথম ম্যাচে তিনি ব্যাট হাতে ১৩ রান করেন এবং বোলিংয়ে ৩ উইকেট (৩/৯২) নেন। এনসিএল-এ তিনি ১৪ ম্যাচে ৯৩৩ রান (গড় ৪৪.৪২) এবং ৩১ উইকেট নিয়েছেন। তার ঘরোয়া ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি খুলনা বিভাগ, আবাহনী লিমিটেড, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এবং লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জের হয়ে খেলেছেন।

জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল)(Shakib Al Hasan)

শাকিবের প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু হয় খুলনা বিভাগের হয়ে। ২০০৫-০৬ মৌসুমে তিনি ৫ ম্যাচে ৩৫০ রান এবং ১২ উইকেট নেন। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স ছিল ২০০৬ সালে রাজশাহী বিভাগের বিপক্ষে, যেখানে তিনি ৮৫ রান এবং ৫/৬৫ নেন। এই পারফরম্যান্স তাকে জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। শাকিবের ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা তাকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)(Shakib Al Hasan)

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) শাকিব একজন প্রভাবশালী অলরাউন্ডার। তিনি বিভিন্ন দলের হয়ে খেলেছেন এবং তিনটি শিরোপা জিতেছেন। তার বিপিএল ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত:

  • ২০১২, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স: ১২ ম্যাচে ২৮০ রান (গড় ২৮.০০, সর্বোচ্চ ৮৬*) এবং ১৫ উইকেট (গড় ১৮.২০)। তিনি ফাইনালে ৪১ রান এবং ২ উইকেট নিয়ে শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
  • ২০১৬, ঢাকা ডায়নামাইটস: ১৩ ম্যাচে ১৪ উইকেট (গড় ২১.৫০) এবং ১২৩ রান। তিনি ফাইনালে রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে ২ উইকেট নেন।
  • ২০২২, ফরচুন বরিশাল: ১১ ম্যাচে ১৭ উইকেট (গড় ১৪.৮৮) এবং ২৮৪ রান (গড় ২৮.৪০)। তিনি টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।
    শাকিব বিপিএল-এ সর্বাধিক ১৪৯ উইকেট নিয়েছেন (গড় ১৮.৫৫, ইকোনমি ৬.৮৫) এবং ১২৪ ম্যাচে ২৭৮৯ রান (গড় ২২.৪৫) করেছেন। তিনি চারবার (২০১২, ২০১৩, ২০১৮, ২০২২) টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শাকিব আবাহনী লিমিটেড এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। ২০১৩ সালে আবাহনীর হয়ে তিনি ১২ ম্যাচে ৩২৫ রান (গড় ৩০.৫০) এবং ১৮ উইকেট (গড় ১৬.৭০) নেন। ২০১৭ সালে মোহামেডানের হয়ে তিনি ১০ ম্যাচে ২৮০ রান এবং ১৫ উইকেট নিয়ে দলকে শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দেন। তার ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রস্তুত করেছে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার(Shakib Al Hasan)

শাকিব ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওডিআই-তে অভিষেক করেন এবং ২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হয়। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিন ফরম্যাটে আইসিসি অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে পৌঁছান।

টেস্ট, ওডিআই এবং টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যান(Shakib Al Hasan)

২০২৫ সাল পর্যন্ত শাকিবের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরিসংখ্যান:

  • টেস্ট: ৭১ ম্যাচ, ৪৬০৯ রান (গড় ৩৮.৩৩), ৫ সেঞ্চুরি, ৩৩ হাফ-সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ ২১৭ (নিউজিল্যান্ড, ২০১৭), ২৪৬ উইকেট (গড় ৩১.১৬), সেরা বোলিং ৭/৩৬।
  • ওডিআই: ২৪৭ ম্যাচ, ৭৫৭০ রান (গড় ৩৭), ৯ সেঞ্চুরি, ৫৬ হাফ-সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ ১৩৪* (কানাডা, ২০১১), ৩১৭ উইকেট (গড় ২৯.৪৮), সেরা বোলিং ৫/২৯।
  • টি-টোয়েন্টি: ১১৭ ম্যাচ, ২৩৮২ রান (গড় ২৩.৩৫), ১২ হাফ-সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ ৮৪, ১৪০ উইকেট (গড় ২০.৮৯), সেরা বোলিং ৫/২০।

উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স ও মাইলফলক

শাকিবের ক্যারিয়ারে অসংখ্য মাইলফলক রয়েছে:

  • ২০০৮, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, চট্টগ্রাম: ৭১ রান এবং ৭/৩৬। এই পারফরম্যান্স তাকে বিশ্ব ক্রিকেটে পরিচিত করে।
  • ২০০৯, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, গ্রেনাডা: ৯৬* রান এবং ৫/৭০ নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম বিদেশি টেস্ট জয়ে নেতৃত্ব।
  • ২০১৪, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, খুলনা: ১৩৭ রান এবং ১০ উইকেট (৬/৫৯, ৪/১১৮), টেস্টে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অলরাউন্ড পারফরম্যান্স।
  • ২০১৭, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ওয়েলিংটন: ২১৭ রান, বাংলাদেশের বিদেশের মাটিতে সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোর।
  • ২০১৯, ওয়ার্ল্ড কাপ: ৬০৬ রান (২ সেঞ্চুরি: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২১, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২৪*) এবং ১১ উইকেট। তিনি একমাত্র ক্রিকেটার যিনি একটি বিশ্বকাপে ৬০০+ রান এবং ১০+ উইকেট নিয়েছেন।
  • ২০২১, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪/৯, তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং।

অধিনায়কত্ব(Shakib Al Hasan)

শাকিব ২০০৯ সালে মাশরাফি মুর্তজার ইনজুরির পর ২২ বছর বয়সে বাংলাদেশের টেস্ট ও ওডিআই অধিনায়ক হন। তিনি ২০০৯-২০২২ সাল পর্যন্ত তিন ফরম্যাটে ১২০ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন। তার নেতৃত্বে উল্লেখযোগ্য অর্জন:

  • ২০০৯: ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২-০ টেস্ট সিরিজ জয়। গ্রেনাডায় প্রথম টেস্টে তিনি ৯৬* রান এবং ৫/৭০ নেন।
  • ২০১১, ওয়ার্ল্ড কাপ: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২ উইকেটে জয়, যেখানে তিনি ৪৩ রান এবং ১ উইকেট নেন।
  • ২০১৫: পাকিস্তান (৩-০), ভারত (২-১) এবং দক্ষিণ আফ্রিকার (২-০) বিপক্ষে ওডিআই সিরিজ জয়। এই সিরিজগুলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত।
  • ২০১৮: টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২-১ সিরিজ জয়, যেখানে তিনি ৫ উইকেট এবং ৮০ রান করেন।

বিশ্বকাপ ও প্রধান টুর্নামেন্ট(Shakib Al Hasan)

শাকিব বিশ্বকাপ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন:

  • ২০০৭ ওয়ার্ল্ড কাপ: ভারতের বিপক্ষে ৫৩ রান এবং ১ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়। বারমুডার বিপক্ষে ৫৭* রান এবং ২ উইকেট।
  • ২০১১ ওয়ার্ল্ড কাপ: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৭ রান এবং ২ উইকেট। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫০ রান এবং ৩ উইকেট।
  • ২০১৫ ওয়ার্ল্ড কাপ: ২৩৪ রান (সর্বোচ্চ ৬৩) এবং ১০ উইকেট। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৫/৩০ নিয়ে বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তরণে অবদান।
  • ২০১৯ ওয়ার্ল্ড কাপ: ৬০৬ রান (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২১, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২৪*) এবং ১১ উইকেট (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫/২৯)। তিনি টুর্নামেন্টের সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচিত হন।
  • ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: ১১ উইকেট, যার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪/৯ এবং পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে ৪/১৫।
  • এশিয়া কাপ: ২০১২ সালে ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬৮ রান এবং ২ উইকেট। ২০১৬ সালে ৪ ম্যাচে ১০ উইকেট এবং ১২০ রান।
  • চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০১৭: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৪ রান এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ উইকেট, বাংলাদেশের সেমিফাইনালে উত্তরণে অবদান।

ব্যাটিং ও বোলিং স্টাইল(Shakib Al Hasan)

  • ব্যাটিং: শাকিব একজন বাঁ-হাতি মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান, যিনি আক্রমণাত্মক এবং প্রতিরক্ষামূলক শটের ভারসাম্য রক্ষা করেন। তার কভার ড্রাইভ, লফটেড কভার শট এবং স্পিনের বিপক্ষে সুইপ শট তাকে বৈচিত্র্যময় করে। তিনি চাপের মুহূর্তে ইনিংস গড়তে পারেন, যেমন ২০১৯ ওয়ার্ল্ড কাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২৪* রান। তার স্ট্রাইক রেট টি-টোয়েন্টিতে ১২২.৫০ এবং ওডিআই-তে ৮২.৬০।
  • বোলিং: বাঁ-হাতি অর্থোডক্স স্পিনার হিসেবে তিনি নিয়ন্ত্রিত লাইন ও লেন্থ বজায় রাখেন। তার বোলিংয়ে ফ্লাইট, ড্রিফট এবং স্পিনের মিশ্রণ তাকে বিপজ্জনক করে। টি-টোয়েন্টিতে তার ইকোনমি রেট ৬.৭৮, যা তার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের প্রমাণ। তিনি প্রায়ই পাওয়ারপ্লে এবং মিডল ওভারে বোলিং করে দলের জন্য উইকেট তুলে নেন।

টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট(Shakib Al Hasan)

শাকিব বিশ্বের প্রায় সব বড় টি-টোয়েন্টি লিগে খেলেছেন, যেখানে তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্স তাকে চাহিদাসম্পন্ন খেলোয়াড় করে তুলেছে।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)(Shakib Al Hasan)

  • কলকাতা নাইট রাইডার্স (২০১১-২০১৭, ২০২১, ২০২৩): ৭১ ম্যাচে ৭৯৩ রান (গড় ২০.৩৩, সর্বোচ্চ ৬৬) এবং ৬৩ উইকেট (গড় ২৮.৫৫)। ২০১২ সালে তিনি ১২ উইকেট এবং ২৮০ রান নিয়ে কেকেআরের শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৪ সালে ফাইনালে তিনি ৪৬ রান এবং ১ উইকেট নেন।
  • সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ (২০১৮-�২০১৯): ১৭ ম্যাচে ২৩৯ রান (গড় ২২.৭২) এবং ১৪ উইকেট (গড় ৩০.১৪)। ২০১৮ সালে তিনি ৫ ম্যাচে ৯ উইকেট নেন।

ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল)(Shakib Al Hasan)

  • জ্যামাইকা তালাওয়াস (২০১৩-২০১৭): ২০১৩ সালে ১১ উইকেট (গড় ১৪.৫৫) এবং ১৫০ রান। ২০১৬ সালে তিনি দলকে শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দেন।
  • বার্বাডোজ রয়্যালস (২০১৪-২০১৬): ২০১৬ সালে ১২ উইকেট (গড় ১৮.৩৩) এবং ১২০ রান।

বিগ ব্যাশ লিগ (বিবিএল)

  • অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স (২০১৪): ৬ ম্যাচে ৬ উইকেট (গড় ২২.৫০) এবং ৮০ রান।
  • মেলবোর্ন রেনেগেডস (২০১৫): ৪ ম্যাচে ৫ উইকেট (গড় ২০.৪০) এবং ৬৫ রান।

পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)

  • করাচি কিংস (২০১৬): ৪ ম্যাচে ৬ উইকেট (গড় ১৮.৬৭)।
  • পেশোয়ার জালমি (২০১৭): ৮ ম্যাচে ১০ উইকেট (গড় ২১.৩০) এবং ১২০ রান।

লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ (এলপিএল)

  • গল মার্ভেলস (২০২০-২০২৪): ২০২১ সালে ৮ উইকেট এবং ১৫০+ রান। ২০২৪ সালে তিনি দলকে সেমিফাইনালে নিয়ে যান।

অন্যান্য লিগ

শাকিব গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি কানাডায় (ব্র্যাম্পটন উলভস, ২০১৯) এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে খেলেছেন। ২০২৪ সালে তিনি লঙ্কা টি১০ লিগে গল মার্ভেলসের হয়ে খেলছেন।

Shakib Al Hasan
Shakib Al Hasan

ব্যক্তিগত জীবন(Shakib Al Hasan)

শাকিব ২০১২ সালে উম্মে আহমেদ শিশিরের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক। তারা ২০১০ সালে ইংল্যান্ডে ওরচেস্টারশায়ারে খেলার সময় প্রথম দেখা করেন। তাদের তিন সন্তান: আলায়না হাসান অব্রি (২০১৫), এররুম হাসান (২০২০) এবং এয়জাহ আল হাসান (২০২১)। শাকিব ২০১৮ সালে মার্কিন গ্রিন কার্ড পান এবং ঢাকা ও নিউ ইয়র্কে সময় কাটান।

শাকিবের শখের মধ্যে রয়েছে হলিউড মুভি দেখা (টাইটানিক, অ্যাভাটার, দ্য ডার্ক নাইট), গলফ খেলা, এবং ফুটবল। তিনি সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয়, ইনস্টাগ্রামে ২.৬ মিলিয়ন ফলোয়ার (@shaki_b75) এবং টুইটারে ১.৫ মিলিয়ন ফলোয়ার। তিনি ইউনিসেফের গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের জন্য কাজ করেন। শাকিব শাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা মাগুরায় শিক্ষা ও ক্রীড়া উন্নয়নে কাজ করে। তিনি বাংলাদেশ ক্যান্সার ফাউন্ডেশন এবং মাদার তেরেসা মিশনকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন।

বিতর্ক(Shakib Al Hasan)

শাকিবের ক্যারিয়ারে কিছু বিতর্ক তাকে শিরোনামে এনেছে:

  • ২০১১: শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআই-তে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গির জন্য জরিমানা।
  • ২০১৪: ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে অংশ নেওয়ার জন্য বিসিবির অনুমতি না নেওয়ায় ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা, যা পরে সাড়ে তিন মাসে কমানো হয়।
  • ২০১৯: আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ইউনিটে বাজি সংক্রান্ত প্রস্তাব রিপোর্ট না করায় এক বছরের নিষেধাজ্ঞা (ছয় মাস স্থগিত)।
  • ২০২১: বিপিএল-এ আম্পায়ারের সাথে তর্কের জন্য তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানা।
  • রাজনৈতিক জড়িততা: ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ২০২৪ সালে মাগুরা-১ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়, এবং তিনি লন্ডন ও নিউ ইয়র্কে সময় কাটান।

উত্তরাধিকার ও প্রভাব(Shakib Al Hasan)

শাকিব আল হাসান বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বশ্রেষ্ঠ তারকা। তিনি আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে ২০০৯-২০১৯ সাল পর্যন্ত টেস্ট, ওডিআই এবং টি-টোয়েন্টিতে শীর্ষ অলরাউন্ডার ছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি তিন ফরম্যাটে একমাত্র নম্বর ১ অলরাউন্ডার হন। তার উল্লেখযোগ্য রেকর্ড:

  • ওডিআই-তে ২০০০ রান এবং ১০০ উইকেট সহ প্রথম বাংলাদেশি।
  • টেস্টে ২০০ উইকেট এবং ৪০০০ রান।
  • টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বাধিক রান ও উইকেট।
    তিনি উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাক-এর বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটারের তালিকায় তিনবার (২০০৯, ২০১০, ২০১৫) স্থান পান। শাকিব তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য অনুপ্রেরণা এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বিশ্ব মঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

বর্তমান অবস্থা(Shakib Al Hasan)

২০২৪ সালে শাকিব টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেন। তিনি ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ওডিআই থেকে অবসর নেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ২০২৪ সালে তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সমস্যার কারণে ইসিবি টুর্নামেন্টে বোলিং থেকে নিষিদ্ধ হন। বর্তমানে তিনি লঙ্কা টি১০ লিগে গল মার্ভেলসের হয়ে খেলছেন। তিনি ব্যবসায়িক উদ্যোগে জড়িত, যার মধ্যে রয়েছে মোনার্ক হোল্ডিংস, বুরাক কমোডিটিস এক্সচেঞ্জ এবং শাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশন। তার সম্পদের মূল্য প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলার। শাকিব রাজনৈতিক ও সামাজিক কার্যক্রমে সক্রিয় থাকলেও ক্রিকেটে তার উত্তরাধিকার অমলিন।

শাকিব আল হাসানের জীবনের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা(Shakib Al Hasan)

১. জন্ম ও শৈশব(Shakib Al Hasan)

মাগুরার শিবপুরে শাকিবের আগমন

শাকিব আল হাসান ১৯৮৭ সালের ২৪ মার্চ বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের মাগুরা জেলার শিবপুর গ্রামে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা খোন্দকার মাসরুর রেজা ছিলেন একজন স্থানীয় ফুটবলার, যিনি মাগুরার ক্লাব ফুটবলে পরিচিত ছিলেন, এবং মা শিরিন রেজা ছিলেন গৃহিণী, যিনি শাকিবের শৈশবের যত্ন নিতেন। শাকিবের একমাত্র বোন জান্নাতুল ফেরদৌস রিতু তার শৈশবের খেলার সঙ্গী ছিলেন। গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা শাকিব শৈশবে ফুটবল এবং ক্রিকেটের প্রতি আকৃষ্ট হন। ১০ বছর বয়সে তিনি স্থানীয় টেপ-বল ক্রিকেট খেলা শুরু করেন, যেখানে তার বাঁ-হাতি বোলিং এবং চটপটে ফিল্ডিং তাকে “ময়না” ডাকনাম এনে দেয়। মাগুরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি স্কুলের ক্রিকেট দলে নিয়মিত খেলতেন। একটি স্থানীয় টুর্নামেন্টে প্রথম বলে উইকেট নেওয়ার ঘটনা তার প্রতিভাকে স্থানীয় কোচদের নজরে আনে, যা তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই প্রাথমিক জীবন শাকিবের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা এবং কঠোর পরিশ্রমের মনোভাব গড়ে তুলতে সহায়তা করে।

২. বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণ(Shakib Al Hasan)

ক্রিকেট প্রতিভার প্রথম স্বীকৃতি

২০০২ সালে শাকিব বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ছয় মাসের ক্রিকেট প্রশিক্ষণে অংশ নেন, যা তার ক্যারিয়ারের একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত। বিকেএসপিতে তার বাঁ-হাতি অর্থোডক্স স্পিন বোলিং এবং আক্রমণাত্মক ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শাকিবের বোলিংয়ে নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাটিংয়ে বৈচিত্র্য তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে। তিনি প্রশিক্ষণের সময় বিভিন্ন ড্রিল এবং ম্যাচে অংশ নিয়ে তার দক্ষতা উন্নত করেন। বিকেএসপির কঠোর প্রশিক্ষণ পরিবেশ তাকে পেশাদার ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত করে। এই সময়ে তিনি বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে ফ্লাইট এবং ড্রিফটের ব্যবহার শিখেন, যা পরবর্তীতে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সফলতার চাবিকাঠি হয়ে ওঠে। বিকেএসপি থেকে ফিরে এসে তিনি ইসলামপুর ক্লাবে যোগ দেন, যেখানে তার পারফরম্যান্স তাকে জাতীয় ক্রিকেট লিগে খেলার সুযোগ এনে দেয়। এই প্রশিক্ষণ শাকিবের ক্রিকেটীয় জীবনে একটি মজবুত ভিত্তি গড়ে দেয়, যা তাকে বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডার হওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।

৩. প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক(Shakib Al Hasan)

খুলনা বিভাগের হয়ে প্রথম পদক্ষেপ

২০০৪ সালে শাকিব খুলনা বিভাগের হয়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগে (এনসিএল) প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক করেন। তার প্রথম ম্যাচে তিনি ব্যাট হাতে ১৩ রান করেন এবং বোলিংয়ে ৩ উইকেট (৩/৯২) নেন। এই ম্যাচে তার বোলিংয়ে নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাটিংয়ে সম্ভাবনা স্থানীয় ক্রিকেট মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ২০০৫-০৬ মৌসুমে তিনি ৫ ম্যাচে ৩৫০ রান (গড় ৪৪.৫০) এবং ১২ উইকেট নেন, যার মধ্যে রাজশাহী বিভাগের বিপক্ষে ৮৫ রান এবং ৫/৬৫ উল্লেখযোগ্য। শাকিবের এই পারফরম্যান্স তাকে জাতীয় দলের নির্বাচকদের নজরে আনে। তিনি খুলনা বিভাগের হয়ে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করেন, এবং তার অলরাউন্ড ক্ষমতা তাকে বাংলাদেশের তরুণ প্রতিভাদের মধ্যে শীর্ষে নিয়ে যায়। এনসিএল-এ তার ১৪ ম্যাচে ৯৩৩ রান (গড় ৪৪.৪২) এবং ৩১ উইকেট তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের জন্য প্রস্তুত করে। এই প্রাথমিক সাফল্য শাকিবের ক্যারিয়ারে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত, যা তাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

৪. ওডিআই অভিষেক(Shakib Al Hasan)

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ধাপ

২০০৬ সালের ৬ আগস্ট শাকিব জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে ওডিআই ক্রিকেটে অভিষেক করেন। এই ম্যাচে তিনি ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন এবং বোলিংয়ে ১ উইকেট নেন। তার শান্ত মাথার ব্যাটিং এবং নিয়ন্ত্রিত বোলিং বাংলাদেশ দলের জন্য একটি নতুন মাত্রা যোগ করে। এই ম্যাচে তিনি মিডল-অর্ডারে ব্যাটিং করে দলের জয়ে অবদান রাখেন, এবং তার বোলিংয়ে ইকোনমি রেট ছিল ৪.৫০। এই অভিষেক শাকিবের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল, যা তাকে বাংলাদেশের অলরাউন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়। তার এই পারফরম্যান্স তাকে জাতীয় দলে নিয়মিত স্থান পেতে সাহায্য করে, এবং পরবর্তীতে তিনি দ্রুতই দলের মূল খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন। শাকিবের ওডিআই অভিষেক তাকে বিশ্ব ক্রিকেটে পরিচিত করার প্রথম ধাপ ছিল, এবং এটি তার ক্যারিয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়।

৫. টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক(Shakib Al Hasan)

ভারতের বিপক্ষে টেস্ট মঞ্চে প্রবেশ

২০০৭ সালের মে মাসে শাকিব ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রামে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক করেন। এই ম্যাচে তিনি ব্যাট হাতে ২৭ রান করেন এবং বোলিংয়ে ৩/১০৫ নেন। যদিও ম্যাচটি ড্র হয়, শাকিবের পারফরম্যান্স তার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। তিনি ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন-আপের বিপক্ষে সাহসিকতার সাথে বোলিং করেন এবং তার বাঁ-হাতি স্পিন দিয়ে বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যানকে সমস্যায় ফেলেন। তার ব্যাটিংয়ে শান্ত মাথার প্রদর্শনী দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই অভিষেক শাকিবের টেস্ট ক্রিকেটে দীর্ঘ ক্যারিয়ারের শুরু হিসেবে চিহ্নিত হয়, এবং তিনি দ্রুতই বাংলাদেশের টেস্ট দলের মূল স্তম্ভ হয়ে ওঠেন। তার এই পারফরম্যান্স তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একজন অলরাউন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথে আরেকটি ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।

৬. ২০০৭ ওয়ার্ল্ড কাপে ভারতের বিপক্ষে জয়(Shakib Al Hasan)

বিশ্ব মঞ্চে প্রথম ঝলক

২০০৭ সালের ওয়ার্ল্ড কাপে শাকিব ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ত্রিনিদাদে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে তিনি ৫৩ রান করেন এবং ১ উইকেট নেন। তার মিডল-অর্ডারের ৫৩ রান বাংলাদেশের ইনিংসকে মজবুত করে, এবং তার বোলিং ভারতের ব্যাটিং লাইন-আপকে চাপে রাখে। বাংলাদেশ এই ম্যাচে ৫ উইকেটে জয়লাভ করে, যা বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের উত্থানের একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। শাকিবের এই পারফরম্যান্স তাকে বিশ্ব ক্রিকেটে পরিচিত করে এবং বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে তার নেতৃত্বের সম্ভাবনা তুলে ধরে। এই জয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং শাকিবকে দলের মূল খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

৭. ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট পারফরম্যান্স(Shakib Al Hasan)

চট্টগ্রামে অলরাউন্ড দক্ষতা

২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে শাকিব ৭১ রান এবং ৭/৩৬ নিয়ে টেস্ট ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেন। এই ম্যাচে তার ব্যাটিং বাংলাদেশের ইনিংসকে স্থিতিশীল করে, এবং তার বোলিং নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন-আপকে ধসিয়ে দেয়। তার ৭/৩৬ বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে অন্যতম সেরা বোলিং ফিগার। শাকিবের এই পারফরম্যান্স তাকে বিশ্ব ক্রিকেটে একজন শীর্ষ অলরাউন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে তার অবস্থান মজবুত করে। এই ম্যাচ বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিযোগিতামূলক হওয়ার সম্ভাবনা তুলে ধরে, এবং শাকিবের নেতৃত্বের গুণাবলী এই ম্যাচে স্পষ্ট হয়।

৮. প্রথম টেস্ট অধিনায়কত্ব(Shakib Al Hasan)

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ

২০০৯ সালে মাশরাফি মুর্তজার ইনজুরির পর শাকিব ২২ বছর বয়সে বাংলাদেশের টেস্ট ও ওডিআই অধিনায়ক হন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গ্রেনাডায় প্রথম টেস্টে তিনি ৯৬* রান এবং ৫/৭০ নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম বিদেশি টেস্ট জয়ে নেতৃত্ব দেন। এই সিরিজে বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে, যা বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে একটি মাইলফলক। শাকিবের নেতৃত্বে দলের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়, এবং তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্স তাকে বিশ্ব ক্রিকেটে একজন উদীয়মান তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এই সিরিজে তার কৌশলগত সিদ্ধান্ত এবং মাঠে শান্ত মাথার প্রদর্শনী তাকে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অধিনায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে।

৯. আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ অলরাউন্ডার(Shakib Al Hasan)

২০০৯ সালে বিশ্ব মঞ্চে শীর্ষে

২০০৯ সালে শাকিব আইসিসি টেস্ট এবং ওডিআই অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে পৌঁছান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে তার ধারাবাহিক পারফরম্যান্স এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পূর্ববর্তী পারফরম্যান্স তাকে এই মর্যাদা এনে দেয়। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন। শাকিবের ব্যাটিং এবং বোলিংয়ে ভারসাম্য তাকে বিশ্বের শীর্ষ অলরাউন্ডারদের সাথে তুলনীয় করে। এই সময়ে তিনি টেস্টে ১৫০০ রান এবং ৫০ উইকেট পূর্ণ করেন, যা তার ধারাবাহিকতার প্রমাণ। এই কৃতিত্ব শাকিবকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় করে এবং তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।

১০. ২০১১ ওয়ার্ল্ড কাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়(Shakib Al Hasan)

ঘরের মাটিতে ঐতিহাসিক জয়

২০১১ সালের ওয়ার্ল্ড কাপে শাকিব ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ৫৭ রান এবং ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ২ উইকেটে জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই ম্যাচে তার শান্ত মাথার ব্যাটিং এবং চাপের মুহূর্তে বোলিং দলকে জয়ের পথে নিয়ে যায়। বাংলাদেশের এই জয় বিশ্ব ক্রিকেটে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এটি ঘরের মাটিতে একটি শক্তিশালী দলের বিপক্ষে তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা প্রমাণ করে। শাকিবের নেতৃত্ব এবং অলরাউন্ড পারফরম্যান্স এই ম্যাচে তার ক্যারিয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়।

১১. আইপিএল-এ কলকাতা নাইট রাইডার্সে যোগদান(Shakib Al Hasan)

২০১১ সালে বিশ্বের বৃহত্তম লিগে প্রবেশ

২০১১ সালে শাকিব কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর) এর হয়ে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) অভিষেক করেন। তিনি ১১ ম্যাচে ১২ উইকেট এবং ১৫০ রান করেন। তার বোলিংয়ে ইকোনমি রেট ছিল ৭.২০, এবং তিনি মিডল-অর্ডারে দ্রুত রান তুলে দলকে শক্তিশালী করে। শাকিবের এই পারফরম্যান্স তাকে আইপিএল-এর অন্যতম চাহিদাসম্পন্ন খেলোয়াড় করে তোলে। কেকেআরের হয়ে তার প্রথম মৌসুমে তিনি বিশ্বের শীর্ষ ক্রিকেটারদের সাথে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন এবং তার অলরাউন্ড দক্ষতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়। এই ঘটনা শাকিবের ক্যারিয়ারে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে, যা তাকে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে একটি বড় নাম করে।

১২. ২০১২ সালে আইপিএল শিরোপা জয়(Shakib Al Hasan)

কেকেআরের সাথে প্রথম শিরোপা

২০১২ সালে শাকিব কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএল শিরোপা জয় করেন। তিনি ১৪ ম্যাচে ১২ উইকেট এবং ২৮০ রান করেন, যার মধ্যে ফাইনালে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে ১ উইকেট এবং ১১ রান উল্লেখযোগ্য। তার বোলিংয়ে নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান তুলে দলকে শিরোপা জয়ে সহায়তা করে। এই শিরোপা শাকিবের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট ক্যারিয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যা তাকে বিশ্বের শীর্ষ অলরাউন্ডারদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করে। শাকিবের এই সাফল্য বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য আইপিএল-এর দরজা আরও খুলে দেয়।

১৩. ২০১২ সালে এশিয়া কাপ ফাইনাল(Shakib Al Hasan)

পাকিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স

২০১২ সালের এশিয়া কাপে শাকিব ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬৮ রান এবং ২ উইকেট নেন। যদিও বাংলাদেশ ২ রানে ম্যাচটি হারে, শাকিবের পারফরম্যান্স বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তুলে ধরে। তার ব্যাটিং বাংলাদেশের ইনিংসকে শক্তিশালী করে, এবং তার বোলিং পাকিস্তানের শীর্ষ ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলে। এই ম্যাচে শাকিবের নেতৃত্ব এবং অলরাউন্ড দক্ষতা তাকে বিশ্ব ক্রিকেটে আরও প্রশংসিত করে। এই ঘটনা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়, যা শাকিবের ক্যারিয়ারে একটি মাইলফলক।

১৪. ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট জয়(Shakib Al Hasan)

খুলনায় ১০ উইকেটের কৃতিত্ব

২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুলনায় শাকিব ১৩৭ রান এবং ১০ উইকেট (৬/৫৯, ৪/১১৮) নিয়ে বাংলাদেশের টেস্ট জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার সেঞ্চুরি বাংলাদেশের ইনিংসকে মজবুত করে, এবং তার বোলিং জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইন-আপকে ধসিয়ে দেয়। এই পারফরম্যান্স শাকিবের টেস্ট ক্রিকেটে অলরাউন্ড দক্ষতার একটি উজ্জ্বল প্রমাণ। এই ম্যাচে তার ১০ উইকেট তাকে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে অনন্য করে তোলে। এই ঘটনা শাকিবের ক্যারিয়ারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।

১৫. ২০১৫ সালে তিন ফরম্যাটে শীর্ষ অলরাউন্ডার(Shakib Al Hasan)

বিশ্ব ক্রিকেটে ঐতিহাসিক কৃতিত্ব

২০১৫ সালে শাকিব আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে টেস্ট, ওডিআই এবং টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই শীর্ষ অলরাউন্ডার হন। তিনি বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন। এই সময়ে তিনি পাকিস্তান, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওডিআই সিরিজ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার ব্যাটিং এবং বোলিংয়ে ধারাবাহিকতা তাকে বিশ্বের শীর্ষ ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করে। এই কৃতিত্ব শাকিবের ক্যারিয়ারে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিশ্ব মঞ্চে উত্থানের প্রতীক হয়ে ওঠে।

১৬. ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২১৭ রান(Shakib Al Hasan)

বিদেশের মাটিতে সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোর

২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটনে শাকিব ২১৭ রানের ইনিংস খেলেন, যা বাংলাদেশের বিদেশের মাটিতে সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোর। এই ইনিংসে তিনি ২৭৬ বলে ২১টি চারের সাহায্যে রান করেন। তার এই ইনিংস বাংলাদেশের ইনিংসকে ৫৯৫/৮ পর্যন্ত নিয়ে যায়। যদিও ম্যাচটি হারে, শাকিবের এই পারফরম্যান্স তার ব্যাটিং দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ইনিংস তাকে বিশ্বের শীর্ষ টেস্ট ব্যাটসম্যানদের মধ্যে স্থান দেয় এবং বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে তার গুরুত্ব তুলে ধরে।

১৭. ২০১৯ ওয়ার্ল্ড কাপে ঐতিহাসিক পারফরম্যান্স(Shakib Al Hasan)

৬০০+ রান এবং ১০+ উইকেট

২০১৯ সালের ওয়ার্ল্ড কাপে শাকিব ৬০৬ রান (২ সেঞ্চুরি, ৫ হাফ-সেঞ্চুরি) এবং ১১ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা অলরাউন্ডার হন। তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২১ রান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২৪* রান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫/২৯ নেন। তিনি বিশ্বকাপ ইতিহাসে একমাত্র ক্রিকেটার যিনি ৬০০+ রান এবং ১০+ উইকেট নিয়েছেন। এই পারফরম্যান্স শাকিবকে বিশ্ব ক্রিকেটের কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং বাংলাদেশের বিশ্বকাপে সেরা পারফরম্যান্সে নেতৃত্ব দেয়।

১৮. ২০১৯ সালে দুর্নীতি বিরোধী নিষেধাজ্ঞা(Shakib Al Hasan)

ক্যারিয়ারের বড় চ্যালেঞ্জ

২০১৯ সালে শাকিব আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ইউনিটে বাজি সংক্রান্ত প্রস্তাব রিপোর্ট না করায় এক বছরের নিষেধাজ্ঞা পান (ছয় মাস স্থগিত)। এই ঘটনা তার ক্যারিয়ারে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হয়। শাকিব এই নিষেধাজ্ঞাকে মেনে নেন এবং তার ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এই সময়ে তিনি ক্রিকেট থেকে দূরে থাকলেও তার জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ণ থাকে। নিষেধাজ্ঞা শেষে তিনি ২০২০ সালে ক্রিকেটে ফিরে আসেন এবং দ্রুতই তার ফর্ম ফিরে পান। এই ঘটনা শাকিবের ক্যারিয়ারে একটি চ্যালেঞ্জ হলেও তার মানসিক শক্তি এবং ফিরে আসার ক্ষমতা তুলে ধরে।

১৯. ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুর্দান্ত বোলিং(Shakib Al Hasan)

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪/৯

২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শাকিব অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪/৯ নিয়ে তার ক্যারিয়ারের সেরা টি-টোয়েন্টি বোলিং ফিগার অর্জন করেন। এই ম্যাচে তার নিয়ন্ত্রিত বোলিং অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন-আপকে ধসিয়ে দেয়। তিনি টুর্নামেন্টে মোট ১১ উইকেট নেন, যা তাকে শীর্ষ উইকেট শিকারীদের একজন করে। শাকিবের এই পারফরম্যান্স বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার গুরুত্ব তুলে ধরে এবং তার বোলিং দক্ষতার প্রমাণ দেয়। এই ঘটনা শাকিবের ক্যারিয়ারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।

২০. ২০২৪ সালে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর(Shakib Al Hasan)

ক্রিকেট ক্যারিয়ারের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি

২০২৪ সালে শাকিব টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেন, তবে তিনি ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ওডিআই থেকে অবসর নেবেন বলে জানান। এই সিদ্ধান্ত তার ক্যারিয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যা তার ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যাত্রার একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটায়। শাকিব তার অবসর ঘোষণায় বলেন, তিনি তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য পথ তৈরি করতে চান। তিনি বর্তমানে লঙ্কা টি১০ লিগে খেলছেন এবং ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক কার্যক্রমে সক্রিয়। এই ঘটনা শাকিবের ক্যারিয়ারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যা তার উত্তরাধিকারকে আরও সুসংহত করে।

Shakib Al Hasan
শাকিব আল হাসানের জীবনীতে জানুন তার প্রাথমিক জীবন, ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার,

শাকিব আল হাসানের ক্রিকেট ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান সারণী(Shakib Al Hasan)

শাকিব আল হাসানের সম্পূর্ণ ক্রিকেট পরিসংখ্যান জানুন, যার মধ্যে রয়েছে টেস্ট, ওডিআই, টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক এবং আইপিএল, বিপিএল, সিপিএল, পিএসএল, বিবিএল, এলপিএল, টি১০ এবং ডিটি২০-তে মোট রান, উইকেট, সেঞ্চুরি, হাফ-সেঞ্চুরি এবং অন্যান্য পারফরম্যান্স মেট্রিক্স। বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডারের ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং রেকর্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। কীওয়ার্ড: শাকিব আল হাসান ক্রিকেট পরিসংখ্যান, শাকিব আল হাসান রান ও উইকেট, বাংলাদেশ ক্রিকেট রেকর্ড, শাকিব আল হাসান আইপিএল পরিসংখ্যান।

ফরম্যাটম্যাচইনিংস (ব্যাট)রানসর্বোচ্চ স্কোরব্যাটিং গড়স্ট্রাইক রেটসেঞ্চুরিহাফ-সেঞ্চুরিচারছক্কাইনিংস (বোলিং)উইকেটসেরা বোলিংবোলিং গড়ইকোনমিস্ট্রাইক রেট (বোলিং)৫ উইকেটক্যাচরান আউট
টেস্ট৭১১৩৫৪,৬০৯২১৭৩৮.৪১৬১.০৭৩১৫৫৬২৮১২১২৪৬৭/৩৬৩১.১৬৩.১৭৫৮.৯১৯২৯
ওডিআই২৪৭২৩৪৭,৫৭০১৩৪*৩৬.৯২৮২.৬৭৫৬৬৯৯৫৪২৪১৩১৭৫/২৯২৯.২১৪.৪৪৩৯.৫৬১১২
টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক১১৭১১৬২,৩৮২৮৪২৩.৩৫১২২.৫০১২২৪২৫০১১৪১৪০৫/২০২০.৮৯৬.৭৮১৮.৪২৬
আইপিএল৭১৫২৭৯৩৬৬*২০.৩৩১২৪.৪৫৭৩২১৬৯৬৩৩/১৭২৮.৫৫৭.৬৮২২.৩১৩
বিপিএল১২৪১১৮২,৭৮৯৮৬*২২.৪৫১২৯.৪৬১৩২৪৮৮৬১২১১৪৯৫/১৬১৮.৫৫৬.৮৫১৬.২৩৫
সিপিএল৩৪২৮৪৮৫৬৪*২০.২১১১৮.৯০৩৯১৬৩৪৩৩৩/২০২৪.৩৩৭.১৫২০.৪১১
পিএসএল১৬১৪২২৮৫২১৮.৪৬১২৮.৮১২০১৬১৮৩/১৮২২.১১৭.৪৫১৭.৮
বিবিএল১১১৫০৩৬১৮.৭৫১১৫.৩৮১৪১১১১২/১৩২১.৬৪৭.৩২১৭.৭
এলপিএল১৮১৬৩২৫৬৩২৩.২১১৩৫.৪২৩০১২১৭২০৩/১০১৯.৪৫৬.৯৫১৬.৮
টি১০১২০৪৫২৪.০০১৬০.০০১২২/১৪২৫.৬৭৮.৫৫১৮.০
ডিটি২০১২১১২৫০৫৭২২.৭৩১৩০.২১২২১২১৪৩/১৫২০.১৪৭.১০১৭.০

ব্যাখ্যা এবং নোট

  • টেস্ট: শাকিব ৭১টি টেস্ট ম্যাচে ৪,৬০৯ রান (৫ সেঞ্চুরি, ৩১ হাফ-সেঞ্চুরি) এবং ২৪৬ উইকেট নিয়েছেন, যার মধ্যে ১৯টি ৫ উইকেট হল। তার সর্বোচ্চ স্কোর ২১৭ (নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০১৭) এবং সেরা বোলিং ৭/৩৬ (নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০০৮)।
  • ওডিআই: ২৪৭ ম্যাচে ৭,৫৭০ রান (৯ সেঞ্চুরি, ৫৬ হাফ-সেঞ্চুরি) এবং ৩১৭ উইকেট, যার মধ্যে ৪টি ৫ উইকেট হল। সর্বোচ্চ স্কোর ১৩৪* (কানাডার বিপক্ষে, ২০১১) এবং সেরা বোলিং ৫/২৯ (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, ২০১৯)।
  • টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক: ১১৭ ম্যাচে ২,৩৮২ রান (১২ হাফ-সেঞ্চুরি) এবং ১৪০ উইকেট, যার মধ্যে ৫টি ৫ উইকেট হল। সর্বোচ্চ স্কোর ৮৪ এবং সেরা বোলিং ৫/২০।
  • আইপিএল: কলকাতা নাইট রাইডার্স (২০১১-২০১৭, ২০২১, ২০২৩) এবং সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ (২০১৮-২০১৯) এর হয়ে ৭১ ম্যাচে ৭৯৩ রান এবং ৬৩ উইকেট। ২০১২ এবং ২০১৪ সালে শিরোপা জয়।
  • বিপিএল: ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স, ঢাকা ডায়নামাইটস এবং ফরচুন বরিশালের হয়ে ১২৪ ম্যাচে ২,৭৮৯ রান এবং ১৪৯ উইকেট। তিনটি শিরোপা জয় (২০১২, ২০১৬, ২০২২)।
  • সিপিএল: জ্যামাইকা তালাওয়াস এবং বার্বাডোজ রয়্যালসের হয়ে ৩৪ ম্যাচে ৪৮৫ রান এবং ৩৩ উইকেট। ২০১৬ সালে শিরোপা জয়।
  • পিএসএল: করাচি কিংস এবং পেশোয়ার জালমির হয়ে ১৬ ম্যাচে ২২৮ রান এবং ১৮ উইকেট।
  • বিবিএল: অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স এবং মেলবোর্ন রেনেগেডসের হয়ে ১১ ম্যাচে ১৫০ রান এবং ১১ উইকেট।
  • এলপিএল: গল মার্ভেলসের হয়ে ১৮ ম্যাচে ৩২৫ রান এবং ২০ উইকেট।
  • টি১০: ২০২৪ সালে লঙ্কা টি১০ লিগে গল মার্ভেলসের হয়ে ৮ ম্যাচে ১২০ রান এবং ৬ উইকেট।
  • ডিটি২০: গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি কানাডা এবং অন্যান্য টি২০ লিগে ১২ ম্যাচে ২৫০ রান এবং ১৪ উইকেট।

অতিরিক্ত নোট:(Shakib Al Hasan)

  • উল্লেখযোগ্য মাইলফলক:
    • শাকিব প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ওডিআই-তে ২,০০০ রান এবং ১০০ উইকেট অর্জন করেন।
    • তিনি ২০১৫ সালে তিন ফরম্যাটে (টেস্ট, ওডিআই, টি-টোয়েন্টি) আইসিসি শীর্ষ অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিং অর্জন করেন।
    • ২০১৯ ওয়ার্ল্ড কাপে তিনি একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ৬০০+ রান এবং ১০+ উইকেট নেন।
  • ফিল্ডিং: শাকিব তার ক্যারিয়ারে ১৫৬টি ক্যাচ এবং ৩২টি রান আউটে অবদান রেখেছেন, যা তার চটপটে ফিল্ডিং দক্ষতার প্রমাণ।
  • বর্তমান অবস্থা (১৮ মে, ২০২৫): শাকিব ২০২৪ সালে টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন এবং ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ওডিআই থেকে অবসর নেবেন। তিনি বর্তমানে লঙ্কা টি১০ লিগে খেলছেন।

Here are some links to reliable sources where you can find detailed biographies and information about Shakib Al Hasan’s life and career:

These sources provide comprehensive details about his early life, cricketing achievements, personal life, and more, updated as of May 18, 2025.

you can also read more biography of shakib khan

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *