গ্রামীণ ব্যাংক: দারিদ্র্য বিমোচনের অগ্রদূত(Grameen Bank)
লেখক: মোহাম্মদ বাইতুল্লাহ | প্রকাশক: Dhakapost.net
ভূমিকা: গ্রামীণ ব্যাংক, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারী ক্ষমতায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এই বিস্তৃত নিবন্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের ইতিহাস, কার্যক্রম, প্রভাব, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ, সামাজিক ব্যবসা এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প জানতে পড়ুন।
১. গ্রামীণ ব্যাংকের ঐতিহাসিক উৎপত্তি( Grameen Bank )
১.১ বাংলাদেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট
১৯৭০-এর দশকে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর দেশটি মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকট, দুর্ভিক্ষ এবং সামাজিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। গ্রামীণ অঞ্চলে জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই ছিল ভূমিহীন, শিক্ষাহীন এবং সুদখোর মহাজনদের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নারীরা ছিলেন অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রান্তিক। এই পরিস্থিতিতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা এবং তাদের আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা প্রকট হয়ে উঠে।
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। এই সময়ে দরিদ্র কৃষক এবং কারিগররা তাদের জীবিকা চালানোর জন্য মহাজনদের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হতেন, যা তাদেরকে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে আটকে রাখত। এই প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ ব্যাংকের ধারণা জন্ম নেয়।

১.২ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা ও দৃষ্টিভঙ্গি ( Grameen Bank )
ড. মুহাম্মদ ইউনূস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক, ১৯৭০-এর দশকে গ্রামীণ দারিদ্র্যের বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বাইরে রেখে কেবল ধনী ও সম্পদশালীদের জন্য কাজ করে। ইউনূস বিশ্বাস করতেন যে দারিদ্র্য কোনো প্রাকৃতিক বা অপরিবর্তনীয় অবস্থা নয়; বরং এটি একটি কাঠামোগত সমস্যা যা সঠিক অর্থনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।
১৯৭৪ সালে চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে ইউনূস একটি ঘটনার মুখোমুখি হন, যা তার জীবনের দিক পরিবর্তন করে। তিনি দেখেন যে একজন দরিদ্র নারী, যিনি বাঁশের তৈরি মুড়ি বিক্রি করতেন, মাত্র কয়েক টাকার জন্য মহাজনের কাছে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে দারিদ্র্যের চক্রে আটকে আছেন। ইউনূস ৪২টি পরিবারকে মাত্র ২৭ মার্কিন ডলার ঋণ দেন, যা তারা সফলভাবে পরিশোধ করেন। এই অভিজ্ঞতা তাকে ক্ষুদ্রঋণের ধারণা প্রবর্তনের জন্য অনুপ্রাণিত করে।
ইউনূসের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সহজ: দরিদ্র মানুষের মধ্যে সৃজনশীলতা ও সম্ভাবনা রয়েছে; তাদের প্রয়োজন শুধু সঠিক সুযোগ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ক্ষুদ্র পরিমাণে জামানতবিহীন ঋণ দরিদ্রদের স্বাবলম্বী করতে পারে এবং তাদের জীবনমান উন্নত করতে পারে। এই দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের ভিত্তি স্থাপন করেন।
১.৩ প্রাথমিক পাইলট প্রকল্প এবং গ্রামীণ মডেলের বিবর্তন
১৯৭৬ সালে ইউনূস চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে জনতা ব্যাংকের সহযোগিতায় একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করেন। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল গ্রামীণ দরিদ্রদের জন্য জামানতবিহীন ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করা। প্রকল্পটি সফল প্রমাণিত হয়, এবং ঋণগ্রহীতারা তাদের ঋণ নিয়মিত পরিশোধ করেন। এই সাফল্য ইউনূসকে উৎসাহিত করে প্রকল্পটি সম্প্রসারণের জন্য।
১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমর্থনে প্রকল্পটি টাঙ্গাইল জেলায় বিস্তৃত হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এই সময়ে ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের মূল নীতিগুলো প্রতিষ্ঠা করেন, যার মধ্যে ছিল দলভিত্তিক ঋণ, নারীদের উপর গুরুত্ব প্রদান, এবং জামানতবিহীন ঋণ ব্যবস্থা।
১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময়ে ব্যাংকটি একটি আধা-সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ শুরু করে, যার মূল লক্ষ্য ছিল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন।
১.৪ প্রাথমিক পর্যায়ের চ্যালেঞ্জ ( Grameen Bank )
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রাথমিক পর্যায়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। প্রথমত, প্রচলিত ব্যাংকিং খাত এবং সমাজের রক্ষণশীল অংশ গ্রামীণ ব্যাংকের ধারণাকে সন্দেহের চোখে দেখত। জামানতবিহীন ঋণ প্রদানের ধারণা তৎকালীন সময়ে অভিনব এবং ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হত।
দ্বিতীয়ত, গ্রামীণ সমাজে নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ছিল। অনেক পরিবার নারীদের ব্যাংকিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণের বিরোধিতা করত। তৃতীয়ত, গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মীদের জন্য গ্রামে গিয়ে ঋণগ্রহীতাদের সাথে কাজ করা ছিল একটি জটিল প্রক্রিয়া। তবুও, ইউনূস এবং তার দল ধৈর্য ও উদ্ভাবনী কৌশলের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করেন।

২. গ্রামীণ ব্যাংকের মূল নীতি ও কার্যক্রম ( Grameen Bank )
২.১ বিশ্বাস-ভিত্তিক ঋণ ব্যবস্থা
গ্রামীণ ব্যাংকের মূল নীতি হলো বিশ্বাস-ভিত্তিক ঋণ। প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঋণ প্রদানের জন্য জামানত বা সম্পত্তির প্রয়োজন হয়, যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য প্রায় অসম্ভব। গ্রামীণ ব্যাংক এই ধারণাকে উলটে দেয় এবং ঋণগ্রহীতার উপর আস্থা রেখে জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করে। এই ব্যবস্থায় ঋণগ্রহীতারা তাদের সততা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করেন।
২.২ দলভিত্তিক ঋণ (Solidarity Groups)
গ্রামীণ ব্যাংকের অন্যতম উদ্ভাবন হলো দলভিত্তিক ঋণ ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় ৫ জনের একটি ক্ষুদ্র দল গঠন করা হয়, যারা একে অপরের ঋণ পরিশোধের জন্য যৌথভাবে দায়বদ্ধ থাকে। তবে, প্রত্যেক ঋণগ্রহীতা তার নিজস্ব ঋণের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকে। দলের সদস্যরা একে অপরকে উৎসাহিত করে এবং ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। এই ব্যবস্থা সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি করে এবং ঋণ পরিশোধের হার বাড়ায়।
২.৩ নারীদের উপর গুরুত্ব
গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের ৯৭% নারী। এই নীতি গ্রামীণ সমাজে নারী ক্ষমতায়নের জন্য একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ। ইউনূস বিশ্বাস করতেন যে নারীরা ঋণের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করেন এবং তাদের পরিবারের জীবনমান উন্নত করতে বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকেন। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক পরিবার ও সমাজে নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে।
২.৪ ঋণ বিতরণ ও পরিশোধ প্রক্রিয়া
গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া সহজ এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য সুবিধাজনক। ব্যাংকের কর্মীরা গ্রামে গিয়ে ঋণগ্রহীতাদের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা পর্যালোচনা করে। ঋণের পরিমাণ সাধারণত কম থাকে, যেমন প্রাথমিকভাবে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত। ঋণ পরিশোধের জন্য সাপ্তাহিক কিস্তি ব্যবস্থা রয়েছে, যা ঋণগ্রহীতাদের জন্য সাশ্রয়ী।
২.৫ গ্রামীণ সভা ও কর্মীদের ভূমিকা
গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো গ্রামীণ সভা। প্রতি সপ্তাহে ঋণগ্রহীতারা একত্রিত হয়ে ঋণ পরিশোধ, ব্যবসায়িক অগ্রগতি এবং সামাজিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এই সভাগুলো শৃঙ্খলা ও একতা শিক্ষা দেয় এবং ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে সামাজিক সংযোগ গড়ে তোলে। ব্যাংকের কর্মীরা এই সভাগুলো পরিচালনা করে এবং ঋণগ্রহীতাদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
২.৬ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা
গ্রামীণ ব্যাংক তার কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখে। ঋণ বিতরণ ও পরিশোধের প্রক্রিয়া সুসংগঠিত এবং নিয়মিত নিরীক্ষিত হয়। ব্যাংকের ওয়েবসাইটে এবং নোটিশ বোর্ডে সকল তথ্য প্রকাশ করা হয়, যাতে ঋণগ্রহীতারা তাদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকেন।
৩. দারিদ্র্য বিমোচন ও নারী ক্ষমতায়নে প্রভাব ( Grameen Bank )
৩.১ বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন
গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত ব্যাংকের মোট ঋণগ্রহীতার সংখ্যা প্রায় ৯৫ লাখ, যার ৯৬.৮১% নারী। ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের হার ৬৮ শতাংশে পৌঁছেছে। ঋণগ্রহীতারা ছোট ব্যবসা, কৃষি, এবং পশুপালনে বিনিয়োগ করে তাদের আয় বৃদ্ধি করেছে।
৩.২ নারী ক্ষমতায়ন
গ্রামীণ ব্যাংক নারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশাল অবদান রেখেছে। নারীরা ঋণ নিয়ে গরু-হাঁস-মুরগির খামার, মৎস্য চাষ, কুটির শিল্প, এবং হস্তশিল্পে বিনিয়োগ করেছে। এই উদ্যোগগুলো তাদের আত্মনির্ভরশীল করেছে এবং পরিবারে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।
৩.৩ সফলতার গল্প
একটি উদাহরণ হলো ফাতেমা বেগমের গল্প, যিনি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ১০,০০০ টাকা ঋণ নিয়ে একটি মুদি দোকান শুরু করেন। তিনি এখন তার পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী এবং তার সন্তানদের শিক্ষার জন্য অর্থ সঞ্চয় করছেন। এমন অসংখ্য গল্প গ্রামীণ ব্যাংকের প্রভাবকে তুলে ধরে।
৩.৪ পরিসংখ্যান ও গবেষণা
বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গেছে যে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তাদের পরিবারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির মান উন্নত হয়েছে। তবে, কিছু সমালোচক মনে করেন যে ক্ষুদ্রঋণ সবার জন্য সমানভাবে কার্যকর নয়, এবং কিছু ঋণগ্রহীতা ঋণের বোঝায় জর্জরিত হতে পারে।
৩.৫ সমালোচনা ও বিতর্ক
গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার এবং অতিরিক্ত ঋণের ঝুঁকি নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। কিছু সমালোচক মনে করেন যে উচ্চ সুদের হার দরিদ্রদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে, গ্রামীণ ব্যাংক জানিয়েছে যে তাদের সুদের হার প্রচলিত মহাজনদের তুলনায় অনেক কম, এবং তারা ঋণগ্রহীতাদের সুবিধার জন্য ঋণ পরিশোধের সময়সূচি পুনর্নির্ধারণ করে।
৪. সম্প্রসারণ ও বিশ্বব্যাপী প্রতিলিপি ( Grameen Bank )
৪.১ বাংলাদেশে সম্প্রসারণ
গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় তার শাখা বিস্তার করেছে। বর্তমানে এটি দেশের প্রায় ৮১,০০০ গ্রামে কাজ করে এবং লক্ষ লক্ষ পরিবারকে সেবা প্রদান করে। ব্যাংকের শাখা সংখ্যা ২,৫০০-এরও বেশি।
৪.২ বিশ্বব্যাপী প্রতিলিপি
গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল বিশ্বের ৬৪টিরও বেশি দেশে প্রতিলিপি করা হয়েছে। ভারত, ফিলিপাইন, কেনিয়া, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রামীণ মডেলের বিভিন্ন রূপ প্রয়োগ করা হয়েছে। গ্রামীণ ফাউন্ডেশন এই মডেলের বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
৪.৩ সফল ও অসফল প্রতিলিপির কেস স্টাডি
ভারতে গ্রামীণ মডেলের প্রয়োগ সফল হয়েছে, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতে। তবে, কিছু দেশে সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক পার্থক্যের কারণে এই মডেল সম্পূর্ণ সফল হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, কিছু আফ্রিকান দেশে দলভিত্তিক ঋণ ব্যবস্থা সমাজের ব্যক্তিবাদী সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি।
৫. আর্থিক স্থায়িত্ব ও শাসন ( Grameen Bank )
৫.১ আর্থিক মডেল
গ্রামীণ ব্যাংক তার আর্থিক স্থায়িত্বের জন্য সুদের হার, আমানত সংগ্রহ এবং বিনিয়োগের উপর নির্ভর করে। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের হার ৯৮% এর বেশি, যা এর আর্থিক শক্তির প্রমাণ।
৫.২ তহবিলের উৎস
গ্রামীণ ব্যাংক সরকারি সহায়তা, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা এবং ঋণগ্রহীতাদের আমানত থেকে তহবিল সংগ্রহ করে। ব্যাংকটি সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয় এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে বিনিয়োগের মাধ্যমেও আয় করে।
৫.৩ শাসন কাঠামো
গ্রামীণ ব্যাংক একটি সংবিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়। এর শেয়ারের ২৫% সরকারের মালিকানায়, এবং বাকি অংশ ঋণগ্রহীতা ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে বণ্টিত। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বোর্ড অফ ডিরেক্টররা এর কার্যক্রম তদারকি করে।
৬. সামাজিক ব্যবসা ও বৈচিত্র্যকরণ ( Grameen Bank )
৬.১ গ্রামীণ পরিবারের সামাজিক ব্যবসা
গ্রামীণ ব্যাংকের পাশাপাশি ড. ইউনূস গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ শক্তি, এবং গ্রামীণ কল্যাণের মতো সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। গ্রামীণ টেলিকম গ্রামীণ ফোনের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান করে। গ্রামীণ শক্তি নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমাধান প্রদান করে।
৬.২ বৈচিত্র্যকরণের যুক্তি
ক্ষুদ্রঋণের বাইরে গিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছে। এই বৈচিত্র্যকরণের লক্ষ্য হলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত করা এবং তাদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা।
৭. পুরস্কার, স্বীকৃতি ও বিশ্বব্যাপী প্রভাব ( Grameen Bank )
৭.১ নোবেল শান্তি পুরস্কার
২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। এই পুরস্কার দারিদ্র্য বিমোচনে তাদের অবদানের জন্য প্রদান করা হয়।
৭.২ অন্যান্য পুরস্কার
গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৯৮ সালে ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাবিটেট অ্যাওয়ার্ড’ এবং ২০০০ সালে ভারতের গান্ধী শান্তি পুরস্কার লাভ করে। এছাড়াও ব্যাংকটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে।
৭.৩ বিশ্বব্যাপী প্রভাব
গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থার নীতি প্রণয়নে প্রভাব ফেলেছে। এটি ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের জন্য একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়।
৮. চ্যালেঞ্জ, সমালোচনা ও অভিযোজন ( Grameen Bank )
৮.১ সমালোচনা
গ্রামীণ ব্যাংকের উচ্চ সুদের হার এবং ঋণের অতিরিক্ত চাপ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে যে ক্ষুদ্রঋণ সবসময় দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যকর নয়।
৮.২ অভিযোজন
গ্রামীণ ব্যাংক সমালোচনার জবাবে তার কার্যক্রমে পরিবর্তন এনেছে। উদাহরণস্বরূপ, ঋণ পরিশোধে অক্ষম ঋণগ্রহীতাদের জন্য নমনীয় পরিশোধ সূচি প্রবর্তন করা হয়েছে।
৯. ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি ( Grameen Bank )
৯.১ প্রযুক্তির ভূমিকা
গ্রামীণ ব্যাংক ভবিষ্যতে ডিজিটাল ব্যাংকিং এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তার সেবা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে। এটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যাংকিং সেবাকে আরও সহজলভ্য করবে।
৯.২ নতুন ফোকাস
ব্যাংকটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ সংরক্ষণে নতুন প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনা করছে। এই প্রকল্পগুলো দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করবে।
৯.৩ গ্রামীণ মডেলের প্রাসঙ্গিকতা
২১শ শতাব্দীতে গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল এখনও প্রাসঙ্গিক। এটি দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
উপসংহার ( Grameen Bank )
গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন ও নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে একটি বিপ্লবী প্রতিষ্ঠান। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দূরদৃষ্টি এবং গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্ভাবনী মডেল লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে। ভবিষ্যতে প্রযুক্তি ও নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক তার প্রভাব আরও বাড়াতে পারবে।

গ্রামীণ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্য: ( Grameen Bank )
১. বাংলাদেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ ব্যাংকের উৎপত্তি:
১৯৭০-এর দশকে বাংলাদেশ একটি নব্য স্বাধীন দেশ হিসেবে চরম অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ছিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর দেশটি অর্থনৈতিক সংকট, দুর্ভিক্ষ এবং দারিদ্র্যের গভীর সংকটে নিমজ্জিত ছিল। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ মানুষ ভূমিহীন ছিলেন এবং তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য উচ্চ সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হতো। এই পরিস্থিতিতে প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা দরিদ্রদের জন্য কোনো সুযোগ প্রদান করত না, কারণ তাদের কাছে জামানত দেওয়ার মতো সম্পদ ছিল না। এই প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ ব্যাংকের ধারণা জন্ম নেয়, যার লক্ষ্য ছিল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে জামানতবিহীন ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেওয়া। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ এই ধারণাকে আরও জরুরি করে তোলে, যখন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দুর্দশা প্রকটভাবে প্রকাশ পায়।
২. ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রাথমিক উদ্যোগ
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক, ১৯৭০-এর দশকে গ্রামীণ দারিদ্র্যের বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে একটি প্রাথমিক উদ্যোগ শুরু করেন, যেখানে তিনি দরিদ্র কারিগরদের কাছে স্বল্প পরিমাণে ঋণ প্রদান করেন। একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনায় তিনি দেখেন যে, একজন নারী মাত্র কয়েক টাকার জন্য মহাজনের উচ্চ সুদের ঋণের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। ইউনূস ৪২ জন দরিদ্র ব্যক্তিকে মাত্র ২৭ মার্কিন ডলার ঋণ দেন, যা তারা সফলভাবে পরিশোধ করেন। এই অভিজ্ঞতা তাকে ক্ষুদ্রঋণের ধারণা প্রবর্তনের জন্য অনুপ্রাণিত করে। ইউনূসের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল যে, দরিদ্র মানুষের মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে, এবং তাদের শুধু সঠিক সুযোগ ও আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। এই দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের ভিত্তি স্থাপন করেন।
৩. পাইলট প্রকল্প এবং প্রাথমিক সম্প্রসারণ
১৯৭৬ সালে ড. ইউনূস জনতা ব্যাংকের সহযোগিতায় চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে জামানতবিহীন ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করেন এবং এর ফলাফল পর্যবেক্ষণ করেন। প্রকল্পটি অত্যন্ত সফল প্রমাণিত হয়, কারণ ঋণগ্রহীতারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন। এই সাফল্যের ভিত্তিতে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমর্থনে প্রকল্পটি টাঙ্গাইল জেলায় সম্প্রসারিত হয়। এই সময়ে ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের মূল নীতিগুলো প্রতিষ্ঠা করেন, যার মধ্যে ছিল দলভিত্তিক ঋণ, নারী ক্ষমতায়ন এবং জামানতবিহীন ঋণ ব্যবস্থা। এই পাইলট প্রকল্পগুলো গ্রামীণ ব্যাংকের মডেলকে পরিমার্জিত করতে সহায়তা করে এবং এর জাতীয় পর্যায়ে সম্প্রসারণের পথ প্রশস্ত করে।
৪. গ্রামীণ ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা
১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক একটি স্বাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই অধ্যাদেশ ব্যাংকটিকে একটি আধা-সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যার মূল লক্ষ্য ছিল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন। প্রতিষ্ঠার সময় ব্যাংকের শেয়ারের ৬০% মালিকানা ছিল সরকারের, এবং বাকি অংশ ঋণগ্রহীতা ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে বণ্টিত হয়। এই সময়ে গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় তার শাখা সম্প্রসারণ শুরু করে এবং দ্রুতই দেশের অন্যতম প্রভাবশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
৫. প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রাথমিক পর্যায়ে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। প্রথমত, প্রচলিত ব্যাংকিং খাত এবং সমাজের রক্ষণশীল অংশ জামানতবিহীন ঋণ প্রদানের ধারণাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখত। অনেকে মনে করতেন যে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ঋণ পরিশোধে সক্ষম হবে না। দ্বিতীয়ত, গ্রামীণ সমাজে নারীদের ব্যাংকিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। অনেক পরিবার নারীদের ঋণ নেওয়া বা গ্রামীণ সভায় অংশগ্রহণের বিরোধিতা করত। তৃতীয়ত, গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মীদের জন্য প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে ঋণগ্রহীতাদের সাথে কাজ করা ছিল একটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। তবে, ড. ইউনূস এবং তার দল ধৈর্য, উদ্ভাবনী কৌশল এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠেন।
৬. নোবেল শান্তি পুরস্কার ও বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি
২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। এই পুরস্কার তাদের দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক উন্নয়নে অবদানের জন্য প্রদান করা হয়। নোবেল কমিটি উল্লেখ করে যে, গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ মডেল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ। এই পুরস্কার গ্রামীণ ব্যাংককে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি এনে দেয় এবং এর মডেলকে অন্যান্য দেশে প্রতিলিপি করার জন্য উৎসাহিত করে। এছাড়াও, গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৯৮ সালে ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাবিটেট অ্যাওয়ার্ড’ এবং ২০০০ সালে ভারতের ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার’ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে।
৭. বাংলাদেশে সম্প্রসারণ ও প্রভাব
প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় তার কার্যক্রম সম্প্রসারণ করেছে। বর্তমানে এটি দেশের প্রায় ৮১,০০০ গ্রামে কাজ করে এবং ৯৫ লাখেরও বেশি ঋণগ্রহীতাকে সেবা প্রদান করে। ব্যাংকের শাখা সংখ্যা ২,৫০০-এরও বেশি। এর ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ পরিবার দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে এসেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রভাব শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও গভীর। বিশেষ করে নারী ক্ষমতায়নে এর ভূমিকা অতুলনীয়, কারণ এর ঋণগ্রহীতাদের ৯৭% নারী।
Here are some relevant links to credible sources providing additional information on the history, impact, and operations of Grameen Bank, focusing on its role in microfinance, poverty alleviation, and women’s empowerment in Bangladesh:
- Grameen Bank Official Website
- URL: grameenbank.org.bd
- Description: The official website of Grameen Bank offers detailed insights into its history, mission, microcredit programs, and impact on poverty alleviation and women’s empowerment. It includes annual reports and data on its operations.
- Nobel Prize – Grameen Bank Facts
- URL: nobelprize.org/prizes/peace/2006/grameen/facts
- Description: This page from the Nobel Prize organization provides information on Grameen Bank’s 2006 Nobel Peace Prize win, its founding by Muhammad Yunus, and its contributions to economic and social development through microcredit.
- Wikipedia – Grameen Bank
- URL: en.wikipedia.org/wiki/Grameen_Bank
- Description: The Wikipedia entry on Grameen Bank offers a comprehensive overview of its history, structure, microfinance model, and criticisms, with references to various studies and reports.
- Britannica – Grameen Bank
- URL: britannica.com/topic/Grameen-Bank
- Description: This article provides a concise summary of Grameen Bank’s establishment, its microcredit model, and its impact on poverty alleviation, with a focus on Muhammad Yunus’s contributions.
- The Borgen Project – Grameen Bank: The Power of Microfinance
- URL: borgenproject.org/grameen-bank-the-power-of-microfinance
- Description: This article discusses Grameen Bank’s role in poverty alleviation and women’s empowerment, highlighting its global influence and data-backed impact on reducing poverty in Bangladesh.
- ResearchGate – Micro Credit and Women Empowerment: A Study on Grameen Bank’s Strategy
- URL: researchgate.net/publication/342991627_Micro_Credit_and_Women_Empowerment_A_Study_on_Grameen_Bank’s_Strategy_of_Poverty_Alleviation
- Description: This academic paper explores Grameen Bank’s microcredit strategy and its impact on women’s empowerment and poverty alleviation in Bangladesh, based on primary and secondary data.
These links provide a mix of primary sources, academic research, and reputable overviews to deepen your understanding of Grameen Bank’s historical significance and its contributions to microfinance and social development.
you can read more also: Muhammad Yunus novel
more : মুহাম্মদ ইউনূস: দারিদ্র্য বিমোচনের অগ্রদূত ও গ্রামীণ ব্যাংকের স্বপ্নদ্রষ্টা