ভ্রমন

সেন্টমার্টিন ভ্রমণ গাইড,খরচ ২০২৫

লেখক: মোহাম্মদ বাইতুল্লাহ | Dhakapost.net

সেন্টমার্টিন :

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যা কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলা থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত এই দ্বীপটি স্থানীয়ভাবে “নারিকেল জিঞ্জিরা” নামেও পরিচিত, কারণ এখানে প্রচুর নারিকেল গাছ রয়েছে। এর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্বচ্ছ ফিরোজা রঙের জল, জীবন্ত প্রবাল প্রাচীর এবং বিচিত্র সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য এটিকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে।

বাংলাদেশের যে কোন জায়গা থেকে সেন্টমার্টিন যাবার উপায়:

বাংলাদেশে যে কোনো জায়গা থেকে সেন্টমার্টিন যেতে হলে সাধারণত কক্সবাজারের টেকনাফ হয়ে যেতে হয়। নিচে বিভিন্ন পথের তথ্য দেওয়া হল:

  • ঢাকা থেকে কক্সবাজার:
    • বাস: ঢাকা থেকে কক্সবাজারের সরাসরি বাস পাওয়া যায়। এসি এবং নন-এসি বাসের ব্যবস্থা আছে, ভাড়া সাধারণত ৮০০ থেকে ৩,৪০০ টাকার মধ্যে।
    • ট্রেন: ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারের ট্রেনও রয়েছে।
    • বিমান: সরাসরি বিমান পথেও যাওয়া যায়।
  • কক্সবাজার থেকে টেকনাফ:
    • কক্সবাজার থেকে লোকাল বাস, মাইক্রোবাস বা জিপ ভাড়া করে টেকনাফ যাওয়া যায়। এতে প্রায় ১-২ ঘণ্টা সময় লাগে।
  • টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন:
    • টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের জন্য প্রতিদিন সকাল ৯টা-সাড়ে ৯টায় জাহাজ ছেড়ে যায়। কুতুবদিয়া, কেয়ারী সিন্দাবাদ, ঈগল, সুন্দরবন ও গ্রীনলাইন সহ বিভিন্ন জাহাজ চলাচল করে। জাহাজের শ্রেণিভেদে আপ-ডাউন ভাড়া ৫৫০-৩০০০ টাকার মত। সাধারণত শীতকালে সমুদ্র শান্ত থাকে।
    • এছাড়াও, স্পিডবোট ও ট্রলারও চলাচল করে, তবে জাহাজ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের সেরা সময় হল শীতকাল।

কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাবার উপায়:

কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যেতে হলে প্রথমে টেকনাফ যেতে হবে।

  • কক্সবাজার থেকে লোকাল বাস, মাইক্রোবাস বা জিপ ভাড়া করে টেকনাফ যাওয়া যায়। এতে প্রায় ১-২ ঘণ্টা সময় লাগে।
  • টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের জন্য প্রতিদিন সকাল ৯টা-সাড়ে ৯টায় জাহাজ ছেড়ে যায়। কুতুবদিয়া, কেয়ারী সিন্দাবাদ, ঈগল, সুন্দরবন ও গ্রীনলাইন সহ বিভিন্ন জাহাজ চলাচল করে। জাহাজের শ্রেণিভেদে আপ-ডাউন ভাড়া ৫৫০-৩০০০ টাকার মত। সাধারণত শীতকালে সমুদ্র শান্ত থাকে।
  • এছাড়াও, স্পিডবোট ও ট্রলারও চলাচল করে, তবে জাহাজ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের সেরা সময় হল শীতকাল। আপনার আর কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

সেন্টমার্টিন

সেন্টমার্টিনের রিসোর্ট ও হোটোল খরচ সহ:

সেন্টমার্টিন দ্বীপে বিভিন্ন ধরনের রিসোর্ট ও হোটেল রয়েছে, যা আপনার বাজেট এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে বেছে নিতে পারেন। অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে, বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে। তাই এই সময়ে আগে থেকে বুকিং করে যাওয়া ভালো।

সাধারণ খরচের ধারণা (প্রতি রাতের জন্য):

  • স্ট্যান্ডার্ড হোটেল/রিসোর্ট (ডাবল বেড): ২০০০-৪০০০ টাকা। ছুটির দিনে এবং পিক সিজনে ভাড়া কিছুটা বাড়তে পারে।
  • ভালো মানের প্রিমিয়াম রিসোর্ট (সি-ভিউ সহ): ৪০০০-১২০০০ টাকা বা তার বেশি।
  • কম খরচের স্থানীয় হোটেল/কটেজ: ৫০০-১৫০০ টাকা (বিশেষ করে বাজারের দিকে)।

কিছু জনপ্রিয় রিসোর্ট ও হোটেলের উদাহরণ এবং আনুমানিক খরচ:

  1. ব্লু মেরিন রিসোর্ট (Blue Marine Resort):
    • অবস্থান: ফেরি ঘাটের খুব কাছে।
    • খরচ: নন-এসি ডাবল বেড রুম প্রায় ৫০০০ টাকা, এসি রুম ১৫০০০ টাকা। ট্রিপল রুম ৩০০০ টাকা, ৬ জনের বেডরুম ৪০০০ টাকা, ১০ জনের বেডরুম ৫০০০ টাকা।
    • সুবিধা: ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ, গাইড সার্ভিস, রেস্তোরাঁ ও বারবিকিউ সুবিধা।
  2. কোরাল ভিউ রিসোর্ট (Coral View Resort):
    • অবস্থান: জাহাজ ঘাটের বাম পাশে (পূর্ব বীচের কাছে)।
    • খরচ: ২৫০০-৬০০০ টাকা।
  3. প্রাসাদ প্যারাডাইস রিসোর্ট (Prashad Paradise Resort):
    • অবস্থান: ব্লু মেরিন রিসোর্ট থেকে কিছুটা উত্তরে।
    • খরচ: ২০০০-৫০০০ টাকা।
  4. দ্বীপান্তর বিচ রিসোর্ট (Dwipantor Beach Resort):
    • খরচ: স্টুডিও রুম ৪০০০ টাকা, এক্সক্লুসিভ কটেজ ৫০০০ টাকা, প্রিমিয়াম কাপল কটেজ ৬০০০ টাকা, ডুপ্লেক্স কটেজ ৮০০০ টাকা।
    • সুবিধা: খোলা ছাদে বসে সমুদ্র উপভোগ করার ব্যবস্থা।
  5. প্রিন্স হেভেন রিসোর্ট (Prince Heaven Resort):
    • খরচ: ১৫০০-৩৫০০ টাকা।
  6. দি আটলান্টিক রিসোর্ট (The Atlantic Resort):
    • অবস্থান: পশ্চিম বীচে।
    • খরচ: ৩৫০০-১২০০০ টাকা।
  7. পান্না রিসোর্ট (Panna Resort):
    • খরচ: ১৫০০-৩৫০০ টাকা।
  8. সিটিবি রিসোর্ট (CTB Resort):
    • অবস্থান: পশ্চিম বীচে।
    • খরচ: ১৫০০-৩০০০ টাকা।
  9. সী প্রবাল রিসোর্ট (Sea Probal Resort):
    • অবস্থান: উত্তর-পশ্চিম বিচ।
    • খরচ: ২০০০-৩৫০০ টাকা।
  10. লাইট হাউজ রিসোর্ট (Light House Resort):
    • অবস্থান: দক্ষিণ-পশ্চিম বিচ।
    • খরচ: ১৫০০-৩০০০ টাকা।

কিছু টিপস:

  • বুকিং: ছুটির দিন বা পিক সিজনে (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে অবশ্যই আগে থেকে রুম বুক করে নিন। অনলাইনে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি বা সরাসরি রিসোর্টের সাথে যোগাযোগ করে বুক করতে পারেন।
  • দরদাম: অফ-সিজনে বা ছুটির দিন ছাড়া গেলে অনেক সময় ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। স্থানীয় কিছু হোটেলে দরদাম করার সুযোগ থাকে।
  • রুম শেয়ারিং: যদি দলবদ্ধভাবে যান, তাহলে ডাবল বেডের রুমে ৪ জন বা তার বেশি লোক থাকলে খরচ ভাগাভাগি করে কমিয়ে আনা যায়।
  • লোকেশন: বাজারের দিকের হোটেলগুলো সাধারণত তুলনামূলকভাবে কম খরচের হয়, কিন্তু সি-ভিউ নাও থাকতে পারে। বিচ-এর কাছাকাছি রিসোর্টগুলো সাধারণত একটু বেশি দামি হয়।

যাওয়ার আগে রিসোর্টগুলোর বর্তমান ভাড়া ও প্রাপ্যতা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে যাওয়া ভালো।

সেন্টমার্টিনে কোথায় খাবেন?

সেন্টমার্টিনে খাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরণের খাবার ও হোটেল/রেস্তোরাঁ রয়েছে। নিচে কিছু জনপ্রিয় খাবার এবং হোটেলের নাম দেওয়া হল:

  • সামুদ্রিক মাছ: সেন্টমার্টিনে এসে সামুদ্রিক মাছ না খেলে অপূর্ণ থেকে যাবে। এখানে কোরাল, রূপচাঁদা, লবস্টার, কালাচাঁদা, টুনা, চিংড়ি, ভেটকি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের মাছ পাওয়া যায়। প্রায় সব রেস্টুরেন্টেই এসব মাছ পাওয়া যায়।
  • বারবিকিউ: রাতের বেলা প্রায় সব হোটেলে ও রেস্তোরাঁতে মাছের বারবিকিউ-এর ব্যবস্থা থাকে। নিজের পছন্দমত মাছ বেছে নিয়ে বারবিকিউ করার সুযোগ থাকে।
  • কুরা: স্থানীয়ভাবে দেশী মুরগিকে কুরা বলা হয়, এটিও একটি জনপ্রিয় খাবার।
  • শুটকি মাছ: এখানে লইট্টা, ছুরি, রূপচাঁদা, কাচকি ইত্যাদি নানা ধরনের শুঁটকি মাছ পাওয়া যায়।
  • ডাব: সেন্টমার্টিনের ডাব খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়ে থাকে।

কিছু জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ:

  • কেয়ারি মারজান রেস্তোরাঁ
  • হোটেল আল্লার দান
  • বিচ পয়েন্ট
  • কুমিল্লা রেস্টুরেন্ট
  • রিয়েল রেস্তোরাঁ
  • হোটেল সাদেক

এছাড়াও, প্রায় সব রিসোর্টেই খাবারের ব্যবস্থা থাকে। সেখানে মেনু অনুযায়ী বিভিন্ন দামে খাবার পাওয়া যায়।

সেন্টমার্টিনে কি খাবেন?

সেন্টমার্টিন দ্বীপে থাকলে আপনার খাদ্যতালিকায় কিছু জিনিস অবশ্যই রাখা উচিত, কারণ এখানকার সামুদ্রিক খাবার খুবই তাজা এবং সুস্বাদু।

এখানে আপনি যা যা খাবেন:

  1. সামুদ্রিক মাছ: সেন্টমার্টিনের প্রধান আকর্ষণই হলো এখানকার তাজা সামুদ্রিক মাছ। বিভিন্ন ধরণের মাছ পাওয়া যায়, যেমন:
    • কোরাল (Coral)
    • রূপচাঁদা (Rupchanda)
    • লবস্টার (Lobster)
    • কালাচাঁদা (Kalachanda)
    • টুনা (Tuna)
    • চিংড়ি (Shrimp)
    • ভেটকি (Bhetki) এগুলো ফ্রাই, গ্রিলড, বা বারবিকিউ করে খাওয়া যেতে পারে।
  2. বারবিকিউ: রাতের বেলা প্রায় সব হোটেলেই তাজা মাছ ও চিকেন বারবিকিউ করার ব্যবস্থা থাকে। আপনার পছন্দমতো মাছ বা মুরগি বেছে নিয়ে বারবিকিউ করিয়ে নিতে পারবেন। এটি সেন্টমার্টিন ভ্রমণের একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা।
  3. কুরা: স্থানীয়ভাবে দেশী মুরগিকে “কুরা” বলা হয়। এটিও এখানকার একটি জনপ্রিয় খাবার এবং বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায়।
  4. শুটকি মাছ: যারা শুঁটকি মাছ পছন্দ করেন, তাদের জন্য সেন্টমার্টিন একটি দারুণ জায়গা। এখানে বিভিন্ন ধরণের শুঁটকি পাওয়া যায়, যেমন:
    • লইট্টা (Loitta)
    • ছুরি (Churi)
    • রূপচাঁদা (Rupchanda)
    • কাচকি (Kachki) বিভিন্ন রেসিপিতে শুঁটকি রান্না করা হয়।
  5. ডাব: সেন্টমার্টিনের ডাব খুব মিষ্টি এবং সুস্বাদু হয়। সমুদ্রের নোনা জল এবং উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে ডাবের স্বাদ আরও বেড়ে যায়। সমুদ্রের ধারে বসে তাজা ডাবের জল পান করা এক দারুণ অভিজ্ঞতা।
  6. অন্যান্য খাবার: সেন্টমার্টিনে সাধারণ বাংলা খাবার যেমন ভাত, ডাল, সবজি, মুরগির মাংস ইত্যাদিও পাওয়া যায়। তবে সামুদ্রিক খাবারই এখানকার প্রধান আকর্ষণ।

অনেক ছোট ছোট রেস্তোরাঁ এবং স্থানীয় দোকানে এসব খাবার পাওয়া যায়। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো জায়গা থেকে খাবার উপভোগ করতে পারেন।

সেন্টমার্টিনে

সেন্টমার্টিনে কি করবেন ও কি দেখবেন?

সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের জন্য অনেক কিছু করার এবং দেখার আছে। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আপনার ভ্রমণকে স্মরণীয় করে তুলবে।

যা যা করবেন (Activities):

  1. সাঁতার ও স্নরকেলিং: সেন্টমার্টিনের স্বচ্ছ ফিরোজা রঙের জলে সাঁতার কাটা বা স্নরকেলিং করা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। প্রবালের কাছাকাছি স্থানে স্নরকেলিং করে সমুদ্রের নিচের রঙিন প্রবাল ও সামুদ্রিক জীব দেখা যায়।
  2. ডুবুরি (স্কুবা ডাইভিং): যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তারা স্কুবা ডাইভিং-এর মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে গিয়ে প্রবাল প্রাচীর ও সামুদ্রিক প্রাণীদের আরও কাছ থেকে দেখতে পারেন। এখানে কিছু প্রতিষ্ঠান স্কুবা ডাইভিং-এর ব্যবস্থা করে।
  3. সাগর তীরে ঘোরাঘুরি: দ্বীপের চারপাশে হেঁটে বেড়ানো বা বালির সৈকতে বসে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখা খুবই উপভোগ্য। পশ্চিম বীচে সূর্যাস্ত এবং পূর্ব বীচে সূর্যোদয় দেখা যায়।
  4. সাইক্লিং: দ্বীপের কিছু অংশে সাইকেল ভাড়া নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায়। এটি দ্বীপের স্থানীয় জীবনযাত্রা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার একটি ভালো উপায়।
  5. কায়াকিং (Kayaking): কায়াকিং করে সমুদ্রের শান্ত জলে ভেসে বেড়ানো এবং দ্বীপের চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
  6. বারবিকিউ পার্টি: রাতের বেলা সমুদ্রের পাড়ে বা রিসোর্টের বারবিকিউ এরিয়ায় তাজা সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ উপভোগ করা একটি দারুণ অভিজ্ঞতা।
  7. ফিশিং/মাছ ধরা: স্থানীয় জেলেদের সাথে মাছ ধরতে যাওয়াও একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা হতে পারে, তবে এর জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে হয়।

যা যা দেখবেন (Sightseeing):

  1. ছেঁড়া দ্বীপ (Chera Dwip): সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। মূল দ্বীপ থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি ছোট বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এটি। জোয়ারের সময় এটি মূল দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ভাটার সময় হেঁটে যাওয়া যায়। এখানে জীবন্ত প্রবাল, পাথরের সারি এবং সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যায়। ট্রলার বা স্পিডবোটে করে যাওয়া যায়।
  2. কোকো বিচ (Coco Beach): এটি সেন্টমার্টিনের পশ্চিম দিকের একটি শান্ত এবং সুন্দর বিচ। এখানে পর্যটকদের ভিড় তুলনামূলকভাবে কম থাকে, তাই যারা নিরিবিলি সময় কাটাতে চান তাদের জন্য এটি আদর্শ।
  3. গলাচিপা: এটি দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত। এখানে কিছু সুন্দর প্রবাল এবং শ্যাওলাযুক্ত পাথরের দেখা মেলে।
  4. বাজার এলাকা: সেন্টমার্টিনের বাজার এলাকাটি স্থানীয় জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। এখানে বিভিন্ন ধরণের সামুদ্রিক পণ্য, শুঁটকি, এবং স্থানীয় হস্তশিল্পের দোকান পাওয়া যায়।
  5. লাইট হাউজ (Lighthouse): এটি দ্বীপের একটি গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডমার্ক, যদিও সাধারণত পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে না।
  6. সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়: পশ্চিম বীচে বসে মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্ত দেখা এবং পূর্ব বীচে সূর্যোদয়ের দৃশ্য উপভোগ করা সেন্টমার্টিন ভ্রমণের একটি অপরিহার্য অংশ।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:

  • পরিবেশ সংরক্ষণ: সেন্টমার্টিন একটি পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এলাকা। প্রবাল বা অন্য কোনো সামুদ্রিক জীব ধ্বংস করা বা সৈকতে আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন।
  • সতর্কতা: সমুদ্রের ধারে হাঁটার সময় পাথরের কারণে পা কেটে যেতে পারে, তাই সাবধানে হাঁটুন। জোয়ার-ভাটার সময় সম্পর্কে জেনে নিন।
  • পানি ও বিদ্যুত: দ্বীপে সুপেয় পানির সংকট এবং বিদ্যুতের অভাব থাকতে পারে (জেনারেটরের উপর নির্ভরশীল)।
  • সীমিত থাকা: একদিনে ঘুরে চলে না এসে অন্তত একরাত থাকুন, তাহলে দ্বীপের প্রকৃত সৌন্দর্য ও শান্ত পরিবেশ উপভোগ করতে পারবেন।

সেন্টমার্টিন ভ্রমণ খরচ:

সেন্টমার্টিন ভ্রমণের খরচ আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা, কতদিন থাকবেন, কোন ধরণের হোটেল/রিসোর্টে থাকবেন এবং কী কী অ্যাক্টিভিটি করবেন তার উপর নির্ভর করে। তবে একটি আনুমানিক ধারণা নিচে দেওয়া হলো:

১. যাতায়াত খরচ (ঢাকা থেকে):

  • বাস (ঢাকা থেকে টেকনাফ):
    • নন-এসি: আসা-যাওয়া সহ ১,৮০০ – ২,৬০০ টাকা (জনপ্রতি)
    • এসি: আসা-যাওয়া সহ ৩,১০০ – ৫,০০০ টাকা (জনপ্রতি)
    • (মনে রাখবেন, কিছু সরাসরি বাস ঢাকা থেকে কক্সবাজার যায়, সেখান থেকে টেকনাফ যেতে হবে। আবার কিছু বাস সরাসরি টেকনাফ পর্যন্ত যায়।)
  • বিমান (ঢাকা থেকে কক্সবাজার):
    • ওয়ান ওয়ে: ৩,৫০০ – ১১,০০০ টাকা বা তার বেশি (সময় ও এয়ারলাইন্স ভেদে)। এরপর কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে হবে (প্রায় ১৫০-২৫০ টাকা)।
  • ট্রেন (ঢাকা থেকে কক্সবাজার):
    • টিকেট: ৬৯৫ – ২,৩৮০ টাকা (সিটের ধরণ ভেদে)। এরপর কক্সবাজার থেকে টেকনাফ।
  • জাহাজ (টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন):
    • নিয়মিত জাহাজ (কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারী ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন, আটলান্টিক, এল সি টি কাজল, শহীদ সুকান্ত বাবু ইত্যাদি): আসা-যাওয়া সহ ৮০০ – ৩,০০০ টাকা (ডেকের ধরন ও জাহাজের মান ভেদে)।
    • স্পিডবোট: অনেক সময় ট্রলারের চেয়ে বেশি ভাড়া লাগে, সাধারণত ৫০০-৭০০ টাকা ওয়ান ওয়ে।

২. থাকা-খাওয়ার খরচ (প্রতিদিন জনপ্রতি আনুমানিক):

  • হোটেল/রিসোর্ট:
    • কম খরচের/স্থানীয় কটেজ: ৫০০ – ১৫০০ টাকা (প্রতি রাত, বাজারের দিকে)।
    • স্ট্যান্ডার্ড হোটেল/রিসোর্ট: ২০০০ – ৪০০০ টাকা (ডাবল বেড রুম প্রতি রাত)।
    • ভালো মানের প্রিমিয়াম রিসোর্ট (সি-ভিউ সহ): ৪০০০ – ১২,০০০ টাকা বা তার বেশি (প্রতি রাত)।
    • টিপস: যদি গ্রুপে যান, তাহলে ডাবল বেডের রুমে ৪ জন বা তার বেশি থাকলে খরচ কমে আসে। ছুটির দিন ছাড়া গেলে ডিসকাউন্ট পাওয়া যেতে পারে।
  • খাবার:
    • সকালের নাস্তা: ১০০ – ১৫০ টাকা।
    • দুপুর/রাতের খাবার: ২০০ – ৪০০ টাকা (প্রতি মিল)।
    • বারবিকিউ (সামুদ্রিক মাছ): ৪০০ – ৬০০ টাকা (জনপ্রতি, মাছের ধরন ও আকার অনুযায়ী)।
    • অন্যান্য (ডাব, স্ন্যাকস): ৫০ – ১০০ টাকা।

৩. স্থানীয় যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ:

  • ভ্যান/অটো: দ্বীপের মধ্যে যাতায়াতের জন্য ২০০-৫০০ টাকা (দূরত্ব অনুসারে)।
  • ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ: ট্রলার বা স্পিডবোটে আসা-যাওয়া ২০০-৩০০ টাকা (জনপ্রতি)।
  • অন্যান্য/ব্যক্তিগত খরচ: ৫০০ – ১০০০ টাকা (যেমন – সাইকেল ভাড়া, শপিং, ছোটখাটো জিনিসপত্র ইত্যাদি)।

আনুমানিক মোট খরচ (২ রাত ৩ দিনের জন্য, ঢাকা থেকে):

এটি একটি সম্ভাব্য হিসাব। খরচ আপনার ব্যক্তিগত পছন্দের উপর অনেকটাই নির্ভর করবে।

  • কম বাজেটে: ৩,৫০০ – ৬,০০০ টাকা (নন-এসি বাস, সাধারণ হোটেল, স্থানীয় খাবার)।
  • মাঝারি বাজেটে: ৭,০০০ – ১২,০০০ টাকা (এসি বাস/ট্রেন, স্ট্যান্ডার্ড রিসোর্ট, ভালো খাবার, কিছু অ্যাক্টিভিটি)।
  • প্রিমিয়াম বাজেটে: ১২,০০০ টাকা থেকে ২০,০০০+ টাকা (বিমান, প্রিমিয়াম রিসোর্ট, সব ধরণের খাবার ও অ্যাক্টিভিটি)।

কিছু টিপস:

  • সিজন: অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে এবং খরচও বেশি হয়। অফ-সিজনে গেলে খরচ কমতে পারে।
  • বুকিং: ছুটির দিনে ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে যাতায়াত ও থাকার ব্যবস্থা আগে থেকে বুক করে রাখা ভালো।
  • গ্রুপ ট্যুর: দলবদ্ধভাবে গেলে খরচ অনেকটাই সাশ্রয় করা সম্ভব হয়, বিশেষ করে থাকা ও যানবাহনের ক্ষেত্রে।
  • দরদাম: কিছু ক্ষেত্রে (বিশেষ করে বাজারের দিকে) দরদাম করার সুযোগ থাকে।

আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা এবং বাজেট অনুযায়ী এই খরচগুলো পরিবর্তন হতে পারে।

সেন্টমার্টিনে

সেন্টমার্টিনে খবার খরচ:

সেন্টমার্টিন দ্বীপে খাবারের খরচ আপনার খাওয়ার ধরন এবং রেস্তোরাঁর মানের ওপর নির্ভর করে। তবে একটি আনুমানিক ধারণা নিচে দেওয়া হলো:

সাধারণ খাবারের খরচ (জনপ্রতি, প্রতি বেলায়):

  • সকালের নাস্তা: ১০০ – ১৫০ টাকা। এতে সাধারণত পরোটা, ডিম ভাজি, ডাল ভাজি বা সবজি এবং চা/কফি অন্তর্ভুক্ত থাকে।
  • দুপুরের খাবার: ২০০ – ৪০০ টাকা। ভাত, ডাল, সবজি, চিকেন কারি বা ছোট মাছের কারি এর অন্তর্ভুক্ত।
  • রাতের খাবার: ২০০ – ৪০০ টাকা। দুপুরের খাবারের মতোই।
  • বারবিকিউ: রাতের বেলা সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ সেন্টমার্টিনের অন্যতম আকর্ষণ। এর খরচ মাছের ধরন (যেমন: কোরাল, রূপচাঁদা, লবস্টার) এবং আকারের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত, প্রতিজনের জন্য ৪০০ – ৬০০ টাকা খরচ হতে পারে।
  • ডাব: ৫০ – ১০০ টাকা (স্থানীয় মিষ্টি ডাব)।
  • স্ন্যাকস/চা/কফি: ৫০ – ১০০ টাকা।

কিছু টিপস:

  • স্থানীয় হোটেল: বাজারের ভিতরের দিকের হোটেলগুলোতে তুলনামূলকভাবে কম খরচে সাধারণ বাংলা খাবার পাওয়া যায়।
  • দরদাম: অনেক সময়, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ কেনার সময় বা বারবিকিউ-এর জন্য দরদাম করার সুযোগ থাকে।
  • প্যাকেজ ডিল: কিছু রেস্তোরাঁয় প্যাকেজ খাবার অফার করে, যেখানে ভর্তা, ডাল, মাছ/চিকেন একসাথে পাওয়া যায়।
  • খাবারের মান: সেন্টমার্টিনে বেশিরভাগ রেস্তোরাঁই মৌলিক মানের হয়। তবে বেশ কিছু রিসোর্টে ভালো মানের নিজস্ব রেস্তোরাঁ আছে, যেখানে খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে।
  • টাটকা সামুদ্রিক খাবার: তাজা সামুদ্রিক মাছের জন্য সন্ধ্যায় বাজার এলাকায় যাওয়া ভালো। সেখানে আপনি নিজের পছন্দ মতো মাছ বেছে নিয়ে বারবিকিউ করে নিতে পারেন।

সব মিলিয়ে, প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা বা তার বেশি খাবারের জন্য খরচ হতে পারে, যা আপনার পছন্দ এবং কতটুকু বিলাসবহুল খাবার গ্রহণ করবেন তার ওপর নির্ভরশীল।

সেন্টমার্টিনে থাকার খরচ:

সেন্টমার্টিন দ্বীপে থাকার খরচ আপনার বাজেট এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে অনেকটাই ভিন্ন হয়। এখানে বিভিন্ন ধরণের রিসোর্ট ও হোটেল রয়েছে।

আবাসনের প্রকারভেদ এবং আনুমানিক খরচ (প্রতি রাতের জন্য):

  1. কম খরচের/স্থানীয় কটেজ বা গেস্ট হাউস:
    • এগুলো সাধারণত বাজারের কাছাকাছি বা মূল বিচ থেকে একটু দূরে অবস্থিত।
    • সাধারণ মানের রুম, মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থাকে।
    • খরচ: ৫০০ টাকা থেকে ১,৫০০ টাকা।
  2. স্ট্যান্ডার্ড হোটেল/রিসোর্ট:
    • এগুলো অপেক্ষাকৃত ভালো মানের হয়, কিছু রিসোর্টে সমুদ্রের দিকে মুখ করা রুমও থাকে।
    • ডাবল বেড রুমের জন্য সাধারণত এই খরচ ধরা হয়।
    • খরচ: ২,০০০ টাকা থেকে ৪,০০০ টাকা।
  3. ভালো মানের প্রিমিয়াম রিসোর্ট (সি-ভিউ বা বিলাসবহুল সুবিধা সহ):
    • এগুলো সাধারণত সমুদ্রের একদম কাছাকাছি বা নিজস্ব বিচ সংলগ্ন হয়।
    • আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, এসি রুম, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি থাকে।
    • খরচ: ৪,০০০ টাকা থেকে ১২,০০০ টাকা বা তার বেশি। কিছু ভিআইপি কটেজ বা স্যুটের ভাড়া আরও বেশি হতে পারে।

খরচ প্রভাবিত করার কারণসমূহ:

  • সময়:
    • পিক সিজন (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি): এই সময়ে পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে, বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে (যেমন – সাপ্তাহিক ছুটি, সরকারি ছুটি, ঈদ, পূজা)। এই সময় রুমের ভাড়া উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়, এমনকি দ্বিগুণও হতে পারে।
    • অফ-সিজন (মার্চ থেকে অক্টোবর): এই সময়ে পর্যটকদের আনাগোনা কম থাকায় ভাড়া কম থাকে। তবে মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সমুদ্র উত্তাল থাকায় সাধারণত জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে।
  • রুমের ধরন: নন-এসি রুমের চেয়ে এসি রুমের ভাড়া বেশি হয়। সমুদ্রের দৃশ্যের (Sea View) রুমের ভাড়াও বেশি হয়।
  • সুযোগ-সুবিধা: রুমে বিদ্যুৎ সরবরাহ (জেনারেটর নির্ভর), অ্যাটাচড বাথরুম, গরম পানির ব্যবস্থা, ওয়াইফাই ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে ভাড়া পরিবর্তিত হয়।
  • অবস্থান: ফেরিঘাট বা বাজার এলাকার কাছাকাছি হোটেলগুলো সাধারণত কিছুটা সস্তা হয়, আর বিচের কাছে বা বিচ্ছিন্ন স্থানে অবস্থিত রিসোর্টগুলো একটু বেশি দামি হয়।
  • বুকিং: আগে থেকে বুকিং করলে অনেক সময় ভালো ডিল পাওয়া যায়, বিশেষ করে পিক সিজনে।

টিপস:

  • যদি দলবদ্ধভাবে (গ্রুপে) যান, তাহলে একটি বড় রুম বা একাধিক রুম নিয়ে ভাড়া ভাগ করে নিলে খরচ কম পড়ে।
  • কম বাজেটে ভ্রমণ করতে চাইলে বাজারের দিকের স্থানীয় কটেজগুলো দেখতে পারেন।
  • যাওয়ার আগে রিসোর্টগুলোর ওয়েবসাইট বা ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে বর্তমান ভাড়া এবং রুমের প্রাপ্যতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

সেন্টমার্টিন ভ্রমণ প্যাকেজ:

সেন্টমার্টিন ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন ধরণের প্যাকেজ ট্যুর পাওয়া যায়, যা আপনার বাজেট, সময় এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে। সাধারণত ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলো এই প্যাকেজগুলো অফার করে থাকে। প্যাকেজগুলো সাধারণত ২ রাত ৩ দিন বা ৩ রাত ৪ দিনের হয়ে থাকে, তবে একদিনের প্যাকেজও পাওয়া যায়।

একটি সাধারণ সেন্টমার্টিন ভ্রমণ প্যাকেজে যা যা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:

১. যাতায়াত:

  • ঢাকা থেকে টেকনাফ: নন-এসি/এসি বাস (আসা-যাওয়া)। কিছু প্রিমিয়াম প্যাকেজে বিমান বা ট্রেনের অপশনও থাকতে পারে (ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত, এরপর টেকনাফ)।
  • টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন: জাহাজের টিকিট (আসা-যাওয়া, ডেক/চেয়ার/কেবিন)।

২. আবাসন:

  • সেন্টমার্টিনে ২/৩ রাতের জন্য হোটেল বা রিসোর্টে থাকার ব্যবস্থা।
  • হোটেলের মান প্যাকেজের দামের ওপর নির্ভর করে (সাধারণ কটেজ থেকে প্রিমিয়াম রিসোর্ট)।
  • রুম সাধারণত ডাবল শেয়ারিং ভিত্তিতে দেওয়া হয়, তবে ফ্যামিলি রুম বা অতিরিক্ত বেড-এর ব্যবস্থা থাকতে পারে।

৩. খাবার:

  • সাধারণত প্যাকেজে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ এবং ডিনার অন্তর্ভুক্ত থাকে।
  • খাবার স্থানীয় বাঙালি বা সামুদ্রিক খাবারের মেনু অনুসরণ করে।
  • রাতের বেলা সমুদ্রের পাড়ে বা রিসোর্টের নিজস্ব জায়গায় বারবিকিউ ডিনার অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, বিশেষ করে তাজা সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ।

৪. ঘোরাঘুরি ও অ্যাক্টিভিটি:

  • ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ: প্যাকেজের অংশ হিসেবে ট্রলারে করে ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
  • স্নরকেলিং/ডুবুরি: কিছু প্যাকেজে স্নরকেলিং-এর ব্যবস্থা থাকে বা অতিরিক্ত ফি দিয়ে স্কুবা ডাইভিং-এর সুযোগ দেওয়া হয়।
  • স্থানীয় গাইড: কিছু প্যাকেজে স্থানীয় গাইড অন্তর্ভুক্ত থাকে যারা দ্বীপের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখাতে সহায়তা করে।
  • সূর্যাস্ত/সূর্যোদয় দেখা: সাধারণত প্যাকেজে এই অভিজ্ঞতার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

প্যাকেজের প্রকারভেদ ও আনুমানিক খরচ (জনপ্রতি):

  • বাজেট প্যাকেজ (২ রাত ৩ দিন):
    • খরচ: ৫,০০০ – ৮,০০০ টাকা।
    • অন্তর্ভুক্ত: নন-এসি বাস, সাধারণ মানের হোটেল/কটেজ, মৌলিক খাবার, জাহাজের ডেক টিকিট।
  • স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজ (২ রাত ৩ দিন):
    • খরচ: ৮,০০০ – ১২,০০০ টাকা।
    • অন্তর্ভুক্ত: এসি বাস, স্ট্যান্ডার্ড মানের হোটেল/রিসোর্ট, ভালো মানের খাবার (বারবিকিউ সহ), জাহাজের চেয়ার/নিয়মিত টিকিট।
  • প্রিমিয়াম/লাক্সারি প্যাকেজ (২ রাত ৩ দিন):
    • খরচ: ১২,০০০ টাকা থেকে ২০,০০০+ টাকা।
    • অন্তর্ভুক্ত: এসি বাস/কক্সবাজার পর্যন্ত বিমান, ভালো মানের প্রিমিয়াম রিসোর্ট (সি-ভিউ সহ), বুফে খাবার, লবস্টার বা প্রিমিয়াম সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ, জাহাজের কেবিন বা ভিআইপি টিকিট, কিছু অ্যাডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটি।

প্যাকেজ কেনার আগে কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখবেন:

  • অন্তর্ভুক্ত কী কী: প্যাকেজে কী কী সেবা অন্তর্ভুক্ত আছে (খাবার, পরিবহন, আবাসন, দর্শনীয় স্থান) তা ভালোভাবে জেনে নিন। কোনো লুকানো খরচ আছে কিনা জিজ্ঞাসা করুন।
  • সময়কাল: প্যাকেজটি কত দিনের জন্য এবং কত রাত সেন্টমার্টিনে থাকবেন তা নিশ্চিত করুন।
  • জাহাজের ধরন: কোন জাহাজে যাতায়াত করবেন এবং টিকিটের ধরন (ডেক, চেয়ার, কেবিন) কী তা জেনে নিন।
  • হোটেল/রিসোর্ট: কোন হোটেল বা রিসোর্টে থাকবেন, তার নাম, ছবি এবং রিভিউ দেখে নিন। রুমের ধরন (এসি/নন-এসি, সি-ভিউ) জেনে নিন।
  • গ্রুপ সাইজ: প্যাকেজটি কতজন ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য এবং যদি প্রাইভেট ট্যুর হয় তবে তার খরচ কত।
  • বুকিং এবং পেমেন্ট: বুকিং প্রক্রিয়া, পেমেন্টের শর্তাবলী এবং বাতিলকরণ নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
  • ভ্রমণের সেরা সময়: সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সেরা সময় হলো নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। এই সময়ে জাহাজ চলাচল নিয়মিত থাকে এবং সমুদ্র শান্ত থাকে। অফ-সিজনে (বিশেষ করে মে-অক্টোবর) অনেক সময় জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে।

বিভিন্ন অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি বা স্থানীয় ট্যুর অপারেটরদের ওয়েবসাইটে সেন্টমার্টিন প্যাকেজের বিস্তারিত তথ্য এবং মূল্য তালিকা পাওয়া যায়।

সেন্টমার্টিন ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা:

সেন্টমার্টিন ভ্রমণ একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে, তবে কিছু টিপস ও সতর্কতা মেনে চললে আপনার যাত্রা আরও আনন্দদায়ক ও নিরাপদ হবে।

ভ্রমণ টিপস:

  1. ভ্রমণের সেরা সময়: সেন্টমার্টিন ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময় হলো নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস। এই সময়টায় সমুদ্র শান্ত থাকে এবং আবহাওয়া আরামদায়ক থাকে। মার্চ মাসের পর থেকে সমুদ্র কিছুটা উত্তাল হতে শুরু করে এবং মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে।
  2. যাতায়াত ও আবাসন বুকিং:
    • বিশেষ করে পিক সিজনে (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) এবং ছুটির দিনগুলোতে ভিড় বেশি থাকে। তাই বাসের টিকিট, জাহাজের টিকিট এবং হোটেলের রুম আগে থেকে বুক করে রাখুন, অন্যথায় ঝামেলায় পড়তে হতে পারে।
    • প্যাকেজ ট্যুর নিলে সব বুকিং ট্যুর অপারেটর করে দেবে, যা ঝামেলা এড়াতে সাহায্য করে।
  3. সকাল সকাল বের হন: টেকনাফ থেকে জাহাজ সাধারণত সকাল ৯টা-সাড়ে ৯টায় ছাড়ে। তাই পর্যাপ্ত সময় নিয়ে টেকনাফ পৌঁছান।
  4. পরিবেশ সচেতনতা:
    • সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এর প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত সংবেদনশীল।
    • কোথাও ময়লা ফেলবেন না। চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল ইত্যাদি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন বা নিজের সাথে নিয়ে আসুন।
    • প্রবাল স্পর্শ করবেন না বা তুলবেন না। প্রবাল জীবন্ত প্রাণী এবং এদের বৃদ্ধি খুব ধীর।
    • সামুদ্রিক প্রাণী শিকার বা বিরক্ত করবেন না।
    • স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
  5. ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ:
    • ছেঁড়া দ্বীপ মূল সেন্টমার্টিন থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত। জোয়ার-ভাটার সময় মেনে এখানে যান।
    • ভাটার সময় হেঁটে যাওয়া গেলেও, জোয়ার এলে চারপাশ পানিতে ভরে যায়। তাই স্থানীয়দের নির্দেশনা মেনে চলুন।
    • ছেঁড়া দ্বীপে কোনো হোটেল বা রেস্তোরাঁ নেই, তাই যাওয়ার সময় পর্যাপ্ত খাবার ও পানি নিয়ে যান।
  6. সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়:
    • পশ্চিম বীচে বসে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করুন।
    • পূর্ব বীচে সূর্যোদয়ের দৃশ্যও দেখতে পারেন।
  7. খাবার:
    • টাটকা সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ উপভোগ করুন। দামাদামি করে নেওয়া ভালো।
    • মিষ্টি ও সুস্বাদু স্থানীয় ডাবের পানি পান করুন।
    • যাদের সামুদ্রিক খাবারে এলার্জি আছে, তারা সতর্ক থাকুন।
  8. স্থানীয়দের সহযোগিতা: প্রয়োজনে স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য নিন বা সাহায্য চান। তারা সাধারণত খুব বন্ধুত্বপূর্ণ হয়।

সতর্কতা:

  1. জোয়ার-ভাটা: সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার সময় সম্পর্কে জেনে নিন। ভাটার সময় গোসল করতে নামুন, কারণ জোয়ারের সময় ঢেউ বিপজ্জনক হতে পারে।
  2. পাথর ও প্রবাল: সমুদ্রের পাড় ধরে হাঁটার সময় বালির নিচে লুকানো প্রবাল বা পাথরে পা কেটে যেতে পারে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করুন বা জলরোধী স্যান্ডেল পরুন।
  3. নোনা পানি: দীর্ঘক্ষণ নোনা পানিতে থাকার পর শরীরে র্যাশ হতে পারে। পর্যাপ্ত পরিষ্কার পানি দিয়ে গোসল করুন।
  4. বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট: সেন্টমার্টিনে বিদ্যুৎ সরবরাহ জেনারেটর নির্ভর, তাই বিদ্যুৎ নাও থাকতে পারে। ইন্টারনেট সংযোগও দুর্বল হতে পারে। জরুরি যোগাযোগের জন্য প্রস্তুত থাকুন।
  5. নিরাপত্তা: রাতে একা সমুদ্রের পাড়ে বা নির্জন স্থানে যাবেন না। ব্যক্তিগত জিনিসপত্র সাবধানে রাখুন।
  6. শিশু ও বয়স্কদের জন্য: যদি শিশু বা বয়স্কদের সাথে ভ্রমণ করেন, তবে তাদের বিশেষ যত্ন নিন। জাহাজ ও ট্রলারে ওঠানামার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন।
  7. ফার্স্ট এইড: একটি ছোট ফার্স্ট এইড কিট সাথে রাখুন, যেখানে সাধারণ ব্যথানাশক, ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক ইত্যাদি থাকবে।
  8. সূর্যের তাপ: দিনের বেলায় সূর্যের তাপ বেশ তীব্র হয়। সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, টুপি পরুন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করে শরীরকে সতেজ রাখুন।
  9. নিয়ম মেনে চলুন: সরকারের নির্দেশনা মেনে চলুন। বিশেষ করে পরিবেশগত সুরক্ষার জন্য যে সকল নিয়ম জারি আছে তা মেনে চলা সবার দায়িত্ব।

এই টিপস ও সতর্কতাগুলো মেনে চললে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ আপনার জন্য আরও নিরাপদ ও আনন্দময় হবে।

here are some links related to Saint Martin’s Island that you might find helpful. Please note that direct booking links or current tour package availability can change frequently, so it’s always best to verify information directly on the websites.


General Information & Travel Guides:


Tour Operators & Travel Agencies (for packages and bookings):

  • ShareTrip: A popular Bangladeshi online travel agency that often offers Saint Martin’s packages. https://sharetrip.net/ (You might need to search for “Saint Martin” or “St Martin’s Island” on their site)
  • GoZayaan: Another well-known online travel agency in Bangladesh that frequently has tour packages. https://www.gozayaan.com/ (Similarly, search for “Saint Martin” or “St Martin’s Island”)
  • Keari Tourizm: They operate one of the main shipping lines to Saint Martin’s, and sometimes offer packages including tickets and accommodation. https://kearitourism.com/ (Check their “Package Tour” or “Saint Martin’s” section)

Accommodation (Hotels & Resorts):


News & Environmental Information:

  • You might find news articles or environmental reports from Bangladeshi news outlets (e.g., The Daily Star, Prothom Alo) by searching for “St Martin’s Island environmental issues” or “Saint Martin’s tourism” if you are interested in more in-depth current affairs about the island.

Remember to always check the most recent reviews and information, especially regarding travel restrictions or changes in service, before making any bookings.

coxs bazar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *