মনিষীদের জীবনী

শেখ মুজিবুর রহমান জীবনী:

শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি বঙ্গবন্ধু নামে সমধিক পরিচিত, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান কাণ্ডারি এবং জাতির পিতা হিসেবে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। তাঁর জীবন ছিল সংগ্রাম, ত্যাগ এবং নেতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতাই ছিলেন না, বরং বাঙালি জাতির মুক্তির প্রতীক এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। এই নিবন্ধে আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়, তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান, বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর ভালোবাসা, এবং তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।(শেখ মুজিবুর রহমান)

শৈশব ও প্রাথমিক জীবন(শেখ মুজিবুর রহমান)

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শেখ লুৎফুর রহমান ছিলেন স্থানীয় আদালতের সেরেস্তাদার এবং মা সায়েরা খাতুন ছিলেন একজন গৃহিণী। শেখ মুজিব ছিলেন তাঁদের চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে তৃতীয় সন্তান। শৈশবে তিনি ‘খোকা’ নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর শৈশব গ্রামীণ পরিবেশে কেটেছে, যেখানে তিনি সাধারণ গ্রামবাসীর মতো খেলাধুলা ও পড়াশোনায় সময় কাটাতেন। তবে, তাঁর মধ্যে শৈশব থেকেই নেতৃত্বের গুণাবলী প্রকাশ পেতে শুরু করে। তিনি গ্রামের সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিতেন এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতেন।

শেখ মুজিব গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। তিনি ছিলেন মেধাবী ছাত্র, তবে শারীরিক দুর্বলতা, বিশেষ করে চোখের সমস্যা (গ্লকোমা), তাঁর পড়াশোনায় কিছুটা বাধা সৃষ্টি করে। ১৩ বছর বয়সে তাঁর চোখের অস্ত্রোপচারের জন্য কলকাতায় যেতে হয়, যার ফলে তাঁর পড়াশোনায় দুই বছরের বিরতি ঘটে। ১৯৩৮ সালে তিনি গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মাওলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন এবং ১৯৪৭ সালে সেখান থেকে বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। কলকাতায় থাকাকালীন তিনি সরকারি বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন, যা বর্তমানে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়েছে।

কলকাতায় পড়াশোনার সময় শেখ মুজিব ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় কাজ করতেন এবং গ্রামের মানুষের সমস্যা সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন। তাঁর এই সামাজিক কার্যক্রম তাঁকে তরুণ বয়সেই জনপ্রিয় করে তোলে।

রাজনৈতিক জীবনের সূচনা(শেখ মুজিবুর রহমান)

শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় কলকাতায় পড়াশোনার সময়। ১৯৩৯ সালে তিনি গোপালগঞ্জে মুসলিম লীগের একটি সম্মেলনে অংশ নেন, যেখানে তিনি প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক মঞ্চে বক্তৃতা দেন। ১৯৪০ সালে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগের ছাত্র সংগঠন নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। তবে, তিনি শীঘ্রই এই কট্টরপন্থী সংগঠন ছেড়ে ১৯৪৩ সালে উদারপন্থী বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগ দেন। এখানে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে আসেন, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেন।

১৯৪৩ সালে শেখ মুজিব বেঙ্গল মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৪৬ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে তিনি মুসলিম লীগের পক্ষে প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ফরিদপুর জেলায় লীগের ওয়ার্কার ইনচার্জ হিসেবে কাজ করেন এবং তৃণমূল পর্যায়ে কৃষক সমাজের কাছে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ন্যায্যতা প্রচার করেন। এই সময় তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতেন এবং তাঁদের সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হতেন।

১৯৪৬ সালে কলকাতায় ভয়াবহ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হলে শেখ মুজিব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে কাজ করেন। তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের সুরক্ষা এবং দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই সময় তিনি যুক্তবঙ্গ আন্দোলনেও যুক্ত হন, যা ভারত ও পাকিস্তানের বাইরে একটি অবিভক্ত স্বাধীন বাংলা গঠনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছিল। যদিও এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি, তবু এটি তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড(শেখ মুজিবুর রহমান)

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর শেখ মুজিব ঢাকায় ফিরে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। এই সময় তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন (৪ জানুয়ারি ১৯৪৮), যা পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী ছাত্র সংগঠন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তিনি ছাত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ শুরু করেন।

শেখ মুজিবুর রহমান
শেখ মুজিবুর রহমান

ভাষা আন্দোলন ও জেল জীবন(শেখ মুজিবুর রহমান)

১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকারের উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। শেখ মুজিব এই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংগঠিত করেন এবং ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিক্ষোভ, সমাবেশ ও হরতালের আয়োজন করেন। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ তিনি প্রথমবার গ্রেপ্তার হন এবং ফরিদপুর জেলে বন্দী হন। তবে, জেলে থাকা সত্ত্বেও তিনি গোপনে আন্দোলন পরিচালনার জন্য নির্দেশনা পাঠাতেন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় শেখ মুজিব জেলে ছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে ছাত্ররা শহীদ হলে তিনি জেল থেকে শোক প্রকাশ করেন এবং আন্দোলনকে আরও তীব্র করার জন্য ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানান। তাঁর নির্দেশে ছাত্রলীগ ও অন্যান্য সংগঠন ভাষা আন্দোলনকে জন আন্দোলনে রূপ দেয়। এই আন্দোলনের ফলে ১৯৫৬ সালে বাংলা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

শেখ মুজিবের জেল জীবন তাঁর রাজনৈতিক দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে ওঠে। তিনি তাঁর জীবনের প্রায় ১২ বছর জেলে কাটিয়েছেন। জেলে থাকাকালীন তিনি বিভিন্ন বই পড়তেন, রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে চিন্তা করতেন এবং সহবন্দীদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতেন। তাঁর জেল জীবনের অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও দৃঢ়চেতা নেতা হিসেবে গড়ে তোলে।

আওয়ামী লীগ গঠন ও প্রাথমিক সংগ্রাম(শেখ মুজিবুর রহমান)

১৯৪৯ সালে শেখ মুজিব মুসলিম লীগ ত্যাগ করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং মওলানা ভাসানীর সঙ্গে মিলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করেন। এই দলটি পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার আদায় এবং পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিব এই দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয় এবং এটি আওয়ামী লীগ নামে পরিচিত হয়। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে দলটি ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র গ্রহণ করে এবং সকল ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত হয়। শেখ মুজিব এই পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের জন্য সকল সম্প্রদায়ের ঐক্য প্রয়োজন।

১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিব যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে গোপালগঞ্জ আসনে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ওয়াহিদুজ্জামানকে ১৩ হাজার ভোটে পরাজিত করেন। এই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসনের মধ্যে ২২৩টি জয় লাভ করে, যার মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ১৪৩টি আসন। শেখ মুজিব প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও বন মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনি কৃষকদের জন্য ভূমি সংস্কার এবং কৃষি উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তবে, কেন্দ্রীয় সরকার এই মন্ত্রিসভা বাতিল করে দেয় এবং শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়।

১৯৫৬ সালে তিনি কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রিসভায় শিল্প, বাণিজ্য ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। এই সময় তিনি পূর্ব পাকিস্তানের শিল্পায়ন এবং শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করেন। তিনি পাট শিল্পের উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন করেন।

ছয় দফা আন্দোলন ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা(শেখ মুজিবুর রহমান)

১৯৬৩ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি পাকিস্তানের তৎকালীন শাসক আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র তত্ত্বের কঠোর সমালোচক ছিলেন। ১৯৬৬ সালে লাহোরে বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে তিনি ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন, যা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের রূপরেখা হিসেবে পরিচিত। ছয় দফা ছিল:

  1. ফেডারেল সরকার ব্যবস্থা এবং সংসদীয় গণতন্ত্র।
  2. কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে।
  3. দুই অঞ্চলের জন্য পৃথক মুদ্রা বা রিজার্ভ ব্যাংক।
  4. কর সংগ্রহ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা প্রদেশের হাতে।
  5. পৃথক বৈদেশিক মুদ্রা অ্যাকাউন্ট।
  6. প্রদেশের জন্য পৃথক আধা-সামরিক বাহিনী।

ছয় দফা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন লাভ করে। এই দাবির জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৯৬৮ সালে শেখ মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার করে। এই মামলায় তাঁকে ভারতের সঙ্গে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তবে, জনরোষের মুখে ১৯৬৯ সালে তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সরকার। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

আগরতলা মামলা শেখ মুজিবকে জাতীয় নেতা হিসেবে আরও জনপ্রিয় করে তোলে। তিনি এই মামলাকে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন এবং জনগণের মধ্যে স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে আরও শক্তিশালী করেন।

১৯৭০ সালের নির্বাচন ও স্বাধীনতা সংগ্রাম(শেখ মুজিবুর রহমান)

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবের নেতৃত্বে জাতীয় পরিষদে ১৬৭টি আসনের মধ্যে ১৬০টি জয় লাভ করে। এই নিরঙ্কুশ বিজয় সত্ত্বেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করতে থাকে। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করলে পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ শেখ মুজিব ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, যা স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এই ভাষণ বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে। তিনি জনগণকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং প্রতিটি গ্রাম ও শহরে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ দেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে এবং শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। গ্রেপ্তারের আগে তিনি ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশ(শেখ মুজিবুর রহমান)

শেখ মুজিবের গ্রেপ্তারের পর ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়। শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয় এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। এই সরকার মুক্তিবাহিনী গঠন করে এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে।

দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৹৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশ-ভারত মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে। শেখ মুজিব ১৹৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন হয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন। তাঁর ফিরে আসার দিন ঢাকার রাস্তায় লাখো মানুষ তাঁকে স্বাগত জানায়।

স্বাধীন বাংলাদেশের নেতৃত্ব(শেখ মুজিবুর রহমান)

১৹৭২ সালের ১২ জানুয়ারি শেখ মুজিব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের জন্য কাজ শুরু করেন। তাঁর শাসনামলে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হয় (১৹৭২), যা জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। তিনি ভূমি সংস্কার, শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

১৹৭৩ সালে তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলা ভাষায় ভাষণ দেন, যা ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ন্যায্যতা তুলে ধরেন এবং উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা কামনা করেন।

১৹৭৫ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন এবং বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, এই ব্যবস্থা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে। তবে, এই সিদ্ধান্ত জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং কিছু মহলের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দেয়।

বাংলা ভাষার প্রতি অবদান(শেখ মুজিবুর রহমান)

শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন মাতৃভাষা বাংলার প্রতি গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি ১৹৪৭ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনা পর্বে অংশ নেন এবং ২১ দফা দাবির ইস্তাহার প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৹৫৬ সালে তিনি আইন পরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান। ১৹৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তিনি অফিসের কাজে বাংলা ভাষা প্রচলনের নির্দেশ জারি করেন। তাঁর এই উদ্যোগ বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৹৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, যা শেখ মুজিবের ভাষা আন্দোলনের সাফল্যের একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, মাতৃভাষা একটি জাতির পরিচয়ের প্রধান উপাদান।

আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও অবদান(শেখ মুজিবুর রহমান)

শেখ মুজিব স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নেতা হিসেবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অধিকার রক্ষায় কাজ করেন। ১৹৭৪ সালে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্যও কাজ করেন এবং ১৹৭৪ সালে লাহোরে ইসলামী সম্মেলনে অংশ নেন।

তিনি বিশ্ব শান্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে কথা বলতেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি সম্মানজনক অবস্থান অর্জন করে।

ব্যক্তিগত জীবন

শেখ মুজিব ১৹৩৮ সালে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের পাঁচ সন্তান: শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল। শেখ ফজিলাতুন্নেছা তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সবসময় পাশে ছিলেন এবং তাঁর সংগ্রামে সঙ্গী হয়েছেন।

শেখ মুজিব ছিলেন একজন সাধারণ মানুষের নেতা। তিনি সাধারণ জীবনযাপন পছন্দ করতেন এবং জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখতেন। তিনি গ্রামের মানুষের সমস্যা শুনতেন এবং তাদের জন্য কাজ করতেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ছিল ত্যাগ ও সংগ্রামের একটি উদাহরণ।

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার(শেখ মুজিবুর রহমান)

১৹৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল সেনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্য নিহত হন। এই ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। তবে, তাঁর মৃত্যু তাঁর আদর্শকে ম্লান করতে পারেনি।

শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন, যা মুজিববাদ নামে পরিচিত, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার উপর ভিত্তি করে গঠিত। তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে সম্মানিত করা হয়। তাঁর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালে ‘মুজিব বর্ষ’ পালিত হয়। তাঁর জীবন ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

উপসংহার(শেখ মুজিবুর রহমান)

শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। তাঁর জীবন ছিল সংগ্রাম, ত্যাগ এবং জনগণের প্রতি অসীম ভালোবাসার এক মহাকাব্য। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তাঁর আদর্শ এবং দর্শন আজও বাংলাদেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। এই নিবন্ধটি শেখ মুজিবের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পাশাপাশি তাঁর অবদানকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটি প্রয়াস।

শেখ মুজিবুর রহমান

Dhakapost.netdhakapost.net

শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ গল্প: বঙ্গবন্ধুর জীবনকাহিনী

শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি বঙ্গবন্ধু নামে সমধিক পরিচিত, বাংলাদেশের জাতির পিতা এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান কাণ্ডারি। তাঁর জীবন ছিল সংগ্রাম, ত্যাগ, নেতৃত্ব এবং জনগণের প্রতি অসীম ভালোবাসার এক মহাকাব্য। এই নিবন্ধে আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ গল্প বিস্তারিতভাবে তুলে ধরব। প্রতিটি গল্প তাঁর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়, রাজনৈতিক সংগ্রাম, এবং জনগণের জন্য তাঁর অবদানকে প্রতিফলিত করে।


১. শৈশবের ‘খোকা’ ও নেতৃত্বের প্রথম স্ফুরণ(শেখ মুজিবুর রহমান)

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তিনি ‘খোকা’ নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর পিতা শেখ লুৎফুর রহমান এবং মা সায়েরা খাতুন তাঁকে স্নেহে লালন করেন। শৈশব থেকেই তিনি সহপাঠীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণ প্রদর্শন করতেন। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে পড়ার সময় তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বই সংগ্রহ করতেন এবং স্কুলের বিভিন্ন কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিতেন। তাঁর শৈশবের এই সামাজিক কার্যক্রম তাঁর ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের ভিত্তি গড়ে দেয়। তবে, ১৩ বছর বয়সে গ্লকোমার কারণে তাঁর চোখের অস্ত্রোপচার করতে হয়, যা তাঁর পড়াশোনায় দুই বছরের বিরতি ঘটায়। এই প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি হাল ছাড়েননি এবং মেধার সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যান।


২. কলকাতায় ছাত্র রাজনীতির সূচনা(শেখ মুজিবুর রহমান)

১৯৩৮ সালে শেখ মুজিব কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। এখানে তিনি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন এবং ১৯৪০ সালে নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। তবে, তিনি শীঘ্রই উদারপন্থী বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৪৩ সালে তিনি বেঙ্গল মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। কলকাতায় থাকাকালীন তিনি সরকারি বেকার হোস্টেলে থাকতেন, যেখানে তিনি সাধারণ ছাত্রদের সমস্যা সমাধানে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর এই সময়ের কার্যক্রম তাঁকে তরুণ বয়সেই জনপ্রিয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।


৩. ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায় শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা(শেখ মুজিবুর রহমান)

১৯৪৬ সালে কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হলে শেখ মুজিব শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে মিলে দাঙ্গা-বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেন এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় কাজ করেন। তিনি রাতভর পথে পথে ঘুরে মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। এই ঘটনা তাঁর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সংকটে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাকে প্রকাশ করে।


৪. যুক্তবঙ্গ আন্দোলনে অংশগ্রহণ(শেখ মুজিবুর রহমান)

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের প্রাক্কালে শেখ মুজিব যুক্তবঙ্গ আন্দোলনে যোগ দেন। এই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল ভারত ও পাকিস্তানের বাইরে একটি অবিভক্ত স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠা। তিনি সোহরাওয়ার্দী এবং শরৎচন্দ্র বসুর সঙ্গে এই আন্দোলনে কাজ করেন। যদিও এই আন্দোলন সফল হয়নি, তবু এটি শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।


৫. পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা(শেখ মুজিবুর রহমান)

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর শেখ মুজিব ঢাকায় ফিরে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী ছাত্র সংগঠন। তিনি ছাত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ শুরু করেন। এই সংগঠন পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


৬. ১৯৪৮ সালে প্রথম গ্রেপ্তার(শেখ মুজিবুর রহমান)

১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করলে পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। শেখ মুজিব এই ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংগঠিত করেন এবং বিক্ষোভের আয়োজন করেন। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ তিনি প্রথমবার গ্রেপ্তার হন এবং ফরিদপুর জেলে বন্দী হন। জেলে থাকা সত্ত্বেও তিনি গোপনে আন্দোলন পরিচালনার জন্য নির্দেশনা পাঠাতেন।


৭. আওয়ামী লীগ গঠন(শেখ মুজিবুর রহমান)

১৯৪৯ সালে শেখ মুজিব মুসলিম লীগ ত্যাগ করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং মওলানা ভাসানীর স with the establishment of the Awami Muslim League in East Pakistan. This organization aimed to champion the rights of the Bengali population and challenge the central authority of Pakistan’s government. Mujib was appointed as the joint secretary of the party, a role that allowed him to mobilize grassroots support. His organizational skills and ability to connect with the masses quickly made him a prominent figure. By 1953, he became the general secretary, steering the party toward a broader, more inclusive platform. In 1955, the party dropped “Muslim” from its name, becoming the Awami League, embracing a secular identity to unite people of all faiths in the struggle for East Pakistan’s rights.


৮. ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে জেল থেকে নেতৃত্ব(শেখ মুজিবুর রহমান)

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় শেখ মুজিব জেলে ছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে ছাত্ররা শহীদ হলে তিনি জেল থেকে শোক প্রকাশ করেন

৯. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়

১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে শেখ মুজিব গোপালগঞ্জ আসনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ওয়াহিদুজ্জামানকে ১৩ হাজার ভোটে পরাজিত করেন। যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসনের মধ্যে ২২৩টি জয় লাভ করে। শেখ মুজিব প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও বন মন্ত্রী হন। তিনি কৃষকদের জন্য ভূমি সংস্কার এবং কৃষি উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু করেন। তবে, কেন্দ্রীয় সরকার এই মন্ত্রিসভা বাতিল করে এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।


১০. ১৯৫৬ সালে মন্ত্রিত্ব ও শিল্পায়নের উদ্যোগ(শেখ মুজিবুর রহমান)

১৯৫৬ সালে শেখ মুজিব কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য ও শ্রম মন্ত্রী হন। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের শিল্পায়নের জন্য পাট শিল্পের উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার নীতি প্রণয়ন করেন। তাঁর এই উদ্যোগ পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


১১. আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচন(শেখ মুজিবুর রহমান)

১৯৬৩ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি দলকে আরও শক্তিশালী করেন এবং পাকিস্তানের তৎকালীন শাসক আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র তত্ত্বের বিরোধিতা করেন। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী প্রধান রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠে।


১২. ছয় দফা দাবির প্রস্তাব

১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব লাহোরে বিরোধী দলগুলোর সম্মেলনে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। এই দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং সামরিক ক্ষমতার দাবি অন্তর্ভুক্ত ছিল। ছয় দফা জনগণের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন পায় এবং বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।


১৩. আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও জনপ্রিয়তা(শেখ মুজিবুর রহমান)

১৯৬৮ সালে পাকিস্তানি সরকার শেখ মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার করে এবং ভারতের সঙ্গে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে। এই মামলা তাঁকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে। ১৯৬৯ সালে জনরোষের মুখে সরকার তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।


১৪. ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়(শেখ মুজিবুর রহমান)

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবের নেতৃত্বে জাতীয় পরিষদে ১৬৭টি আসনের মধ্যে ১৬০টি জয় লাভ করে। এই বিজয় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ছিল। তবে, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করে।


১৫. ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ শেখ মুজিব ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তিনি বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এই ভাষণ বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে।


১৬. স্বাধীনতার ঘোষণা

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে এবং শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে তিনি ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়।


১৭. পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী জীবন

শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তারের পর পশ্চিম পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি জেলে বন্দী করা হয়। সেখানে তিনি কঠোর নির্যাতনের শিকার হন। তবে, তাঁর মনোবল ভাঙেনি। তিনি জেলে থাকাকালীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের খবর পেতেন এবং জনগণের বিজয়ে আস্থা রাখতেন।


১৮. স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসা

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন হয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন। তাঁর ফিরে আসার দিন লাখো মানুষ তাঁকে স্বাগত জানায়। তিনি জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন।


১৯. সংবিধান প্রণয়ন ও শাসনকার্য

১৯৭২ সালে শেখ মুজিব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়, যা জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার উপর ভিত্তি করে গঠিত। তিনি ভূমি সংস্কার, শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কাজ করেন।


২০. ১৯৭৫ সালের ট্র্যাজেডি

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল সেনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিব এবং তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্য নিহত হন। এই ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। তবে, তাঁর আদর্শ এবং দর্শন আজও বাংলাদেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।


উপসংহার

শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের এই ২০টি গল্প তাঁর সংগ্রাম, ত্যাগ এবং নেতৃত্বের অসাধারণ দৃষ্টান্ত। তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির প্রতীক এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। তাঁর আদর্শ এবং দর্শন নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। এই নিবন্ধটি তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পাশাপাশি তাঁর অবদানকে বিশ্বব্যাপী প্রচারের একটি প্রয়াস।

তথ্য সুত্র :

Below are some credible source links that can be referenced for the article on Sheikh Mujibur Rahman’s life. These sources provide detailed historical information, official records, and perspectives on his contributions to Bangladesh’s independence and legacy. Since the content is based on historical facts and widely available information, these links can serve as a foundation for further verification and depth:

  1. Bangladesh Government Official Website
  • URL: http://www.bangladesh.gov.bd/
  • Description: The official government portal of Bangladesh, which includes historical records and information about Sheikh Mujibur Rahman as the Father of the Nation.
  1. Bangladesh Liberation War Museum
  • URL: http://www.liberationwarMuseum.org/
  • Description: A reputable source providing detailed documentation of the Liberation War of 1971, including Mujib’s role and speeches.
  1. BBC Archives on Bangladesh Independence
  1. The Daily Star – Historical Articles
  • URL: https://www.thedailystar.net/
  • Description: A leading Bangladeshi newspaper with archives containing articles and analyses on Mujib’s life, political career, and the 1971 war.
  1. University of Dhaka – History Department Resources
  • URL: http://www.du.ac.bd/
  • Description: The University of Dhaka, where Mujib was actively involved, offers academic resources and research papers on the language movement and independence struggle.
  1. Al Jazeera – Bangladesh Liberation War
  1. Banglapedia – National Encyclopedia of Bangladesh
  • URL: http://en.banglapedia.org/
  • Description: An authoritative online encyclopedia with detailed entries on Sheikh Mujibur Rahman, the language movement, and the Liberation War.
  1. The Guardian – Historical Archives

read more: Rabindranath

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *