ভ্রমন

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ গাইড,খরচ ২০২৫

লেখক: মোহাম্মদ বাইতুল্লাহ | Dhakapost.net 

উপকূলবর্তী সৌন্দর্যের এক দারুণ উদাহরণ হলো কক্সবাজার। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে এর অবস্থান এবং এর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক বালুকাময় সমুদ্রসৈকত একে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে।

প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্রসৈকতটি পর্যটকদের কাছে এক বিশাল আকর্ষণ। এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত বা সূর্যোদয় দেখা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। সমুদ্রের গর্জন, ঢেউয়ের ওঠানামা, এবং সৈকতে লাল কাঁকড়ার বিচরণ প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করে তোলে।

কক্সবাজারের মূল আকর্ষণ শুধু সমুদ্রসৈকত নয়, এর আশেপাশেও রয়েছে বহু দর্শনীয় স্থান। যেমন:

  • ইনানী বিচ: স্বচ্ছ জল এবং বিশাল পাথরের জন্য ইনানী বিচ বিশেষভাবে পরিচিত।
  • হিমছড়ি: এখানকার ঝর্ণা এবং পাহাড়ী সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
  • ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক: এটি বাংলাদেশের প্রথম সাফারি পার্ক, যেখানে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে বিচরণ করে।
  • মহেশখালী দ্বীপ: এই দ্বীপে আদিনাথ মন্দির এবং বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে, যা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়।
  • সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ: যদিও কক্সবাজার থেকে কিছুটা দূরে, তবুও এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ এবং কক্সবাজার ভ্রমণকারীরা প্রায়শই এটি ঘুরে দেখতে যান।

কক্সবাজারের স্থানীয় সংস্কৃতিও বেশ বৈচিত্র্যময়। এখানে স্থানীয় রাখাইন জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে, যাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। এখানকার স্থানীয় সামুদ্রিক খাবারও বেশ জনপ্রিয়, বিশেষ করে তাজা মাছ এবং শুঁটকি।

পর্যটকদের সুবিধার জন্য এখানে অনেক হোটেল, মোটেল, রিসর্ট এবং রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন বাজেট অনুযায়ী এখানে থাকার এবং খাওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে।

সব মিলিয়ে, কক্সবাজার একটি মনোমুগ্ধকর স্থান যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং আরামদায়ক অবকাশের জন্য উপযুক্ত। এটি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

কক্সবাজার কিভাবে যাবেন?

কক্সবাজার ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন উপায় আছে, আপনার পছন্দ এবং বাজেট অনুযায়ী আপনি যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন। বাংলাদেশর প্রধান শহর ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জনপ্রিয় মাধ্যমগুলো নিচে দেওয়া হলো:

১. বিমান পথে:

  • দ্রুততম এবং সবচেয়ে আরামদায়ক উপায়: ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট রয়েছে। বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স, এয়ার আস্ট্রা সহ বেশ কিছু এয়ারলাইন্স এই রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে।
  • সময়: ঢাকা থেকে প্রায় ৫৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা সময় লাগে।
  • সুবিধা: যারা দ্রুত পৌঁছাতে চান এবং আরামে ভ্রমণ করতে চান, তাদের জন্য এটি সেরা বিকল্প।
  • বিমানবন্দর থেকে শহর: কক্সবাজার বিমানবন্দর শহর থেকে খুব কাছে, যা যাতায়াত আরও সহজ করে তোলে।

২. বাস পথে:

  • সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সাশ্রয়ী উপায়: ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে অনেক বাস চলাচল করে।
  • ঢাকা থেকে: ঢাকার সায়দাবাদ, গাবতলী এবং মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সৌদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস. আলম পরিবহন, মডার্ন লাইন ইত্যাদি বিভিন্ন পরিবহনের এসি ও নন-এসি বাস পাওয়া যায়।
    • সময়: ঢাকা থেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে।
    • ভাড়া: শ্রেণী ভেদে প্রতি সীটের ভাড়া ৯০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
  • চট্টগ্রাম থেকে: চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যেও নিয়মিত বাস সার্ভিস রয়েছে।
    • সময়: চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগে।
    • ভাড়া: নন-এসি ৪২০ টাকা থেকে ৭২০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৮০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা।

৩. রেল পথে:

  • নতুন এবং আরামদায়ক বিকল্প: সম্প্রতি ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাথে কক্সবাজারের সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য একটি নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।
  • ট্রেনের নাম: “কক্সবাজার এক্সপ্রেস” এবং “পর্যটক এক্সপ্রেস” ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যায়। এছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে “প্রবাল এক্সপ্রেস” এবং “সৈকত এক্সপ্রেস” কক্সবাজার যাতায়াত করে।
  • সময়: ঢাকা থেকে প্রায় ৮ থেকে সাড়ে ৮ ঘণ্টা এবং চট্টগ্রাম থেকে প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে।
  • ভাড়া: শোভন চেয়ার ৬৯৫ টাকা, এসি স্নিগ্ধা ১৩২৫ টাকা এবং এসি বার্থ ২৩৮০ টাকা (ঢাকা থেকে)। চট্টগ্রাম থেকে সর্বনিম্ন ১৮৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৪০ টাকা।
  • সুবিধা: যারা বাসের লম্বা জার্নি পছন্দ করেন না বা ট্রেনের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে যাত্রা করতে চান, তাদের জন্য এটি ভালো বিকল্প। কক্সবাজারের রেলওয়ে স্টেশনটি ঝিনুকের আদলে তৈরি একটি দৃষ্টিনন্দন স্টেশন। এটি শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পূর্বে ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় অবস্থিত।

স্থানীয় যাতায়াত:

কক্সবাজারে পৌঁছে আপনি সিএনজি, ইজিবাইক (অটো রিক্সা), রিক্সা, বা স্থানীয় জিপ ব্যবহার করে সৈকত এবং অন্যান্য দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন।

আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনা অনুযায়ী উপযুক্ত পরিবহন মাধ্যম নির্বাচন করে নিতে পারেন।

কক্সবাজার

কক্সবাজার কোথায় থাকবেন?

কক্সবাজারে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরণের হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। আপনার বাজেট ও পছন্দের ওপর নির্ভর করে, আপনি যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন। নিচে কিছু জনপ্রিয় স্থানের তালিকা দেওয়া হলো:

  • লাক্সারি হোটেল ও রিসোর্ট:
    • সায়মন বিচ রিসোর্ট (Sayeman Beach Resort): এটি কক্সবাজারের অন্যতম সেরা রিসোর্টগুলোর মধ্যে একটি। এখানে আধুনিক সব সুবিধা রয়েছে এবং সমুদ্র সৈকতের খুব কাছে অবস্থিত।
    • ওয়েল পার্ক রেসিডেন্স (Well Park Residence): এটিও একটি বিলাসবহুল হোটেল, যেখানে আধুনিক সব সুবিধা রয়েছে।
    • হোটেল সি ক্রাউন (Hotel Sea Crown): এটি একটি জনপ্রিয় হোটেল, যা সমুদ্র সৈকতের কাছে অবস্থিত। এখানে থাকার জন্য আরামদায়ক কক্ষ এবং অন্যান্য আধুনিক সুবিধা রয়েছে।
    • মারমেইড বিচ রিসোর্ট (Mermaid Beach Resort): এটি একটি সুন্দর রিসোর্ট, যা তার নিজস্ব সৈকতের জন্য পরিচিত। যারা একটু শান্ত পরিবেশে থাকতে চান, তাদের জন্য এটি ভালো।
  • মধ্যম মানের হোটেল ও রিসোর্ট:
    • হোটেল কল্লোল (Hotel Kollol): এটি একটি জনপ্রিয় হোটেল, যা মধ্যম বাজেটের মধ্যে ভালো থাকার ব্যবস্থা করে।
    • গ্র্যান্ড বিচ হোটেল (Grand Beach Hotel): এটিও একটি ভালো মানের হোটেল, যা সৈকতের কাছে অবস্থিত।
    • হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইস (Hotel Palace Paradise): এটি মাঝারি মানের একটি হোটেল, যেখানে প্রয়োজনীয় সব সুবিধা রয়েছে।
  • কম বাজেটের হোটেল ও গেস্ট হাউস:
    • কক্সস বাজার গেস্ট হাউস (Cox’s Bazar Guest House): এটি কম খরচে থাকার জন্য একটি ভালো বিকল্প।
    • হোটেল আল-আমিন (Hotel Al-Amin): এটিও একটি সাশ্রয়ী মূল্যের হোটেল, যেখানে মৌলিক সুবিধাগুলো পাওয়া যায়।
    • এছাড়া, কলাতলী মোড় ও লাবনী বীচ এর আশেপাশে অনেক বাজেট ফ্রেন্ডলি হোটেল ও গেস্ট হাউস পাওয়া যায়।

আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী, আপনি যেকোনো একটি বাছাই করতে পারেন। অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে (যেমন booking.com, agoda.com) আপনি রিভিউ ও রেটিং দেখে আপনার জন্য সেরা হোটেলটি বেছে নিতে পারেন।

কক্সবাজার থাকার খরচ কতো?

কক্সবাজারে থাকার খরচ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, যেমন:

  • সময়কাল: পিক সিজন (অক্টোবর থেকে মার্চ) এবং অফ-পিক সিজন (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) – এই দুই সময়ে দামের অনেক পার্থক্য হয়। পিক সিজনে হোটেল ও রিসোর্টের ভাড়া বেশি থাকে, আর অফ-পিক সিজনে ৩০-৬০% পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়।
  • হোটেলের ধরন ও মান: বাজেট হোটেল, মিড-রেঞ্জ হোটেল, লাক্সারি রিসোর্ট – প্রতিটি শ্রেণীর জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাড়া হয়।
  • অবস্থান: সমুদ্র সৈকতের যত কাছে হবে, সাধারণত ভাড়া তত বেশি হয়।
  • রুমের ধরন: সাধারণ রুম, ডিলাক্স রুম, স্যুট, সি-ভিউ রুম ইত্যাদির ভাড়াও ভিন্ন হয়।
  • সুবিধাসমূহ: সুইমিং পুল, রেস্টুরেন্ট, ব্রেকফাস্ট, জিম, স্পা ইত্যাদি সুবিধার ওপরও ভাড়া নির্ভর করে।

একটি মোটামুটি ধারণা নিচে দেওয়া হলো:

১. বাজেট হোটেল/গেস্ট হাউস (১-২ স্টার মান):

যারা কম খরচে থাকতে চান, তাদের জন্য এই ধরনের হোটেল ও গেস্ট হাউস উপযুক্ত।

  • প্রতি রাতের ভাড়া: ৮০০ টাকা থেকে ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত।
  • এগুলো সাধারণত কলাতলী মোড়, লাবনী বিচ এলাকার ভেতরের দিকে বা শহরের আশেপাশে পাওয়া যায়। মৌলিক সুবিধা (যেমন – ফ্যান/এসি, এটাচড বাথরুম) এখানে থাকে।

২. মিড-রেঞ্জ হোটেল ও রিসোর্ট (২-৪ স্টার মান):

বেশিরভাগ পর্যটক এই ক্যাটাগরির হোটেল বেছে নেন। এখানে ভালো মানের সেবা এবং আধুনিক সুবিধা পাওয়া যায়।

  • প্রতি রাতের ভাড়া: ৩,০০০ টাকা থেকে ৬,০০০ টাকা পর্যন্ত।
  • এই রেঞ্জের হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে হোটেল সি ক্রাউন, সী প্যালেস, সী গাল, কোরাল রিফ, নিটোল রিসোর্ট, হোটেল বিচ ওয়ে, হোটেল কল্লোল ইত্যাদি।

৩. লাক্সারি হোটেল ও রিসোর্ট (৪-৫ স্টার মান):

যারা বিলাসবহুল পরিবেশে এবং উচ্চমানের সেবা চান, তাদের জন্য এই ধরনের রিসোর্টগুলো। এগুলো সাধারণত সরাসরি সমুদ্রের পাশে অবস্থিত হয়।

  • প্রতি রাতের ভাড়া: ৬,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০,০০০ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে। (বিশেষ ক্ষেত্রে ১ লাখ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে)
  • এই ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, সায়মন বিচ রিসোর্ট, লং বিচ হোটেল, ওশান প্যারাডাইস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, দ্য কক্স টুডে, মারমেইড বিচ রিসোর্ট ইত্যাদি।

বিশেষ টিপস:

  • অফ-সিজনে ভ্রমণ: আপনি যদি খরচ কমাতে চান, তাহলে বর্ষাকাল বা গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারেন। এই সময়ে হোটেলের ভাড়া অনেক কমে যায়।
  • অনলাইন বুকিং: ভ্রমণের আগে অনলাইন ট্র্যাভেল এজেন্সি (যেমন Booking.com, Agoda, ShareTrip, GoZayaan) থেকে বুকিং দিলে ভালো অফার পাওয়া যেতে পারে।
  • দরাদরি: কম বাজেটের হোটেল বা গেস্ট হাউসে সরাসরি গিয়ে দরদাম করলে অনেক সময় ভালো ছাড় পাওয়া যায়, বিশেষ করে অফ-সিজনে।
  • গ্রুপ ভ্রমণ: দলবদ্ধভাবে ভ্রমণ করলে হোটেল রুমের খরচ ভাগাভাগি হয়ে যায়, ফলে জনপ্রতি খরচ কমে আসে।
কক্সবাজার

সুতরাং, আপনার বাজেট এবং প্রত্যাশা অনুযায়ী কক্সবাজারের থাকার খরচ ভিন্ন হতে পারে।

কক্সবাজার ট্যুর প্লান:

কক্সবাজার ট্যুর প্ল্যান আপনার বাজেট, সময় এবং আগ্রহের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। এখানে একটি ৩ দিন ২ রাতের আদর্শ ট্যুর প্ল্যান দেওয়া হলো, যা অধিকাংশ পর্যটকদের জন্য উপযোগী। আপনি এটি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করে নিতে পারেন।

কক্সবাজার ট্যুর প্ল্যান: ৩ দিন ২ রাত

১ম দিন: আগমন ও সমুদ্র সৈকত

  • সকাল:
    • সকালে কক্সবাজার পৌঁছান (বিমান/বাস/ট্রেন)।
    • হোটেল/রিসোর্টে চেক-ইন করুন এবং ফ্রেশ হয়ে নিন।
    • সকালের নাস্তা সেরে নিন।
  • দুপুর:
    • দুপুরের খাবার (সি-ফুড বা আপনার পছন্দের খাবার)।
    • লাবনী বিচ বা সুগন্ধা বিচে যান। এটি কক্সবাজারের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং পরিচিত সৈকত।
    • সমুদ্রের ধারে হাঁটুন, ঢেউ উপভোগ করুন, ছবি তুলুন।
  • বিকাল:
    • সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করুন। এটি কক্সবাজারের অন্যতম সেরা আকর্ষণ।
    • সৈকতে বসে স্থানীয় স্ন্যাকস (যেমন: ঝালমুড়ি, ভাঁজাপোড়া) উপভোগ করতে পারেন।
  • সন্ধ্যা:
    • হোটেল/রিসোর্টে ফিরে বিশ্রাম নিন।
    • রাতের খাবার (যেকোনো স্থানীয় রেস্তোরাঁ থেকে সি-ফুড বা আপনার পছন্দের খাবার)।
    • রাতের বেলা সৈকতে হাঁটতে পারেন, রাতের সৈকতের পরিবেশও বেশ শান্ত ও মনোরম।
  • রাত: হোটেলে রাত্রিযাপন।

২য় দিন: ইনানী, হিমছড়ি ও মেরিন ড্রাইভ

  • সকাল:
    • সকালের নাস্তা সেরে নিন।
    • একটি রিজার্ভড সিএনজি/জিপ/ইজি বাইক ভাড়া করে ইনানী ও হিমছড়ি ভ্রমণের জন্য বেরিয়ে পড়ুন।
    • মেরিন ড্রাইভ: কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যাত্রা করুন। এটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর সড়ক। একদিকে পাহাড় আর অন্যদিকে সমুদ্রের নয়নাভিরাম দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।
    • হিমছড়ি: মেরিন ড্রাইভ ধরে হিমছড়ি যান। এখানকার পাহাড়, ঝর্ণা (শুকনো মৌসুমে ছোট থাকে) এবং সবুজের সমারোহ খুবই সুন্দর। হিমছড়ির চূড়ায় উঠে পুরো এলাকার প্যানোরামিক ভিউ দেখতে পারেন।
    • ইনানী বিচ: এরপর ইনানী বিচে যান। এর স্বচ্ছ নীল জল এবং বড় বড় পাথরের উপস্থিতি একে অনন্য করে তুলেছে। এখানে কিছু সময় কাটান এবং ছবি তুলুন।
  • দুপুর:
    • ইনানী বা মেরিন ড্রাইভের পাশে অবস্থিত কোনো স্থানীয় রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার। তাজা সি-ফুড এখানে দারুণ পাওয়া যায়।
  • বিকাল:
    • কক্সবাজার শহরে ফিরে আসুন।
    • বিকেলে কেনাকাটার জন্য সময় রাখতে পারেন। বার্মিজ মার্কেট থেকে বার্মিজ আচার, হাতে তৈরি জিনিসপত্র, শুঁটকি ইত্যাদি কিনতে পারেন।
  • সন্ধ্যা:
    • হোটেল/রিসোর্টে ফিরে বিশ্রাম নিন।
    • রাতের খাবার।
  • রাত: হোটেলে রাত্রিযাপন।

৩য় দিন: অন্যান্য আকর্ষণ ও প্রস্থান

  • সকাল:
    • সকালের নাস্তা সেরে নিন।
    • আজকে আপনি আপনার আগ্রহ অনুযায়ী কিছু জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন:
      • ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক: যদি বন্যপ্রাণী দেখতে চান, তাহলে শহরের বাইরে অবস্থিত এই সাফারি পার্কে যেতে পারেন (তবে এর জন্য একটু বেশি সময় লাগবে)।
      • মহেশখালী দ্বীপ: যারা ভিন্ন অভিজ্ঞতা চান, তারা স্পিডবোটে করে মহেশখালী দ্বীপে যেতে পারেন। এখানে আদিনাথ মন্দির, রাখাইন পাড়া, বৌদ্ধ মন্দির ইত্যাদি দেখা যায়। (এর জন্য প্রায় অর্ধবেলা সময় লাগবে)।
      • কক্সবাজার ল্যান্ডিং স্টেশন/মাছের বাজার: স্থানীয় জেলেদের মাছ ধরা দেখতে বা তাজা মাছ কিনতে চাইলে এই বাজারে যেতে পারেন।
  • দুপুর:
    • দুপুরের খাবার।
    • হোটেল থেকে চেক-আউট করুন।
  • বিকাল/সন্ধ্যা:
    • কক্সবাজার থেকে আপনার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিন (বিমান/বাস/ট্রেন)।

অতিরিক্ত টিপস:

  • পোশাক: আরামদায়ক ও হালকা পোশাক নিন। সমুদ্র সৈকতে ভেজার জন্য অতিরিক্ত পোশাক রাখুন।
  • সানস্ক্রিন ও টুপি: রোদের হাত থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিন, টুপি বা ক্যাপ সাথে নিন।
  • স্যান্ডেল/ফ্লিপ-ফ্লপ: সৈকতে হাঁটার জন্য উপযোগী জুতা নিন।
  • গাইড/পরিবহন: স্থানীয় গাইডের প্রয়োজন না হলে, নিজেরা সিএনজি/জিপ ভাড়া করে নিতে পারেন। দরদাম করতে ভুলবেন না।
  • নিরাপত্তা: সমুদ্রের গভীরে যাবেন না এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকা মেনে চলুন।
  • পিক সিজনে বুকিং: যদি পিক সিজনে যান, তাহলে হোটেল ও পরিবহনের টিকেট আগে থেকে বুক করে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
  • বৃষ্টি: বর্ষাকালে গেলে বৃষ্টির প্রস্তুতি রাখুন।

এই প্ল্যানটি একটি সাধারণ ধারণা, আপনি আপনার পছন্দ এবং সময় অনুযায়ী যেকোনো কিছু যোগ বা বাদ দিতে পারেন। আনন্দময় হোক আপনার কক্সবাজার ভ্রমণ!

কক্সবাজার কোথায় খাবেন?

কক্সবাজারে বিভিন্ন ধরণের খাবারের দোকান ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে আপনি আপনার স্বাদ ও বাজেট অনুযায়ী খাবার উপভোগ করতে পারেন। নিচে কিছু জনপ্রিয় জায়গার তালিকা দেওয়া হলো:

  • সি-ফুড:
    • ঝিনুক: এটি কক্সবাজারের একটি জনপ্রিয় সি-ফুড রেস্টুরেন্ট। এখানে বিভিন্ন ধরণের সামুদ্রিক মাছ ও সি-ফুড পাওয়া যায়। এদের মেন্যুতে বিভিন্ন ধরণের বাঙালি থালি ও বিরিয়ানি পাওয়া যায়। ঠিকানা: হোটেল সি ক্রাউনের পাশে, কলাতলী, কক্সবাজার।
    • পৌষি রেস্টুরেন্ট: এটিও সি-ফুডের জন্য পরিচিত, বিশেষ করে এদের লবস্টার ও গ্রিলড ফিশ বেশ জনপ্রিয়। ঠিকানা: লাবনী পয়েন্ট, কক্সবাজার।
    • এছাড়াও লাবনী বিচ এবং কলাতলী এলাকায় আরও অনেক সি-ফুড রেস্টুরেন্ট ও স্টল খুঁজে পাবেন।
  • বাংলা ও ইন্ডিয়ান খাবার:
    • হান্ডি: এখানে আপনি বিভিন্ন ধরণের বিরিয়ানি, কাবাব ও ইন্ডিয়ান কারি উপভোগ করতে পারেন। ঠিকানা: প্রধান সড়ক, কক্সবাজার।
    • দিয়া গোল্ডেন রেস্টুরেন্ট: এটি বাঙালি খাবারের জন্য পরিচিত। এখানে বিভিন্ন ধরণের মাছ, মাংস ও সবজির পদ পাওয়া যায়। ঠিকানা: কলাতলী, কক্সবাজার।
  • ফাস্ট ফুড ও স্ন্যাকস:
    • কক্সবাজারে বিভিন্ন ফাস্ট ফুডের দোকান ও ক্যাফেতে বার্গার, পিজ্জা, স্যান্ডউইচ ও অন্যান্য স্ন্যাকস পাওয়া যায়। লাবনী বিচ ও কলাতলী এলাকায় এইসব দোকান বেশি দেখা যায়।
  • কম বাজেটের খাবার:
    • কক্সবাজারে বিভিন্ন স্থানীয় হোটেলে কম খরচে ভাত, মাছ ও মাংসের খাবার পাওয়া যায়।
    • লাবনী বিচ ও কলাতলী এলাকার আশেপাশে অনেক ভাতের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে আপনি ২০০-৪০০ টাকার মধ্যে খাবার খেতে পারবেন।
  • কিছু জনপ্রিয় খাবার:
    • কক্সবাজার বিরিয়ানি: এখানকার বিরিয়ানি বেশ জনপ্রিয়, যা প্রায় সব রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায়।
    • সামুদ্রিক মাছ: বিভিন্ন ধরণের মাছ, যেমন কোরাল, রূপচাঁদা, লবস্টার ও চিংড়ি এখানে পাওয়া যায়। গ্রিলড ফিশ ও ফিশ কারি এখানে খুব জনপ্রিয়।
    • শুঁটকি মাছ: কক্সবাজারের শুঁটকি মাছ সারাদেশে বিখ্যাত। আপনি বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও দোকানে এটি চেখে দেখতে পারেন।
    • নারিকেলের দুধ দিয়ে রান্না করা খাবার: এখানে অনেক খাবারে নারিকেলের দুধ ব্যবহার করা হয়, যা খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে তোলে।

আপনার স্বাদ ও বাজেট অনুযায়ী, আপনি এই রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকানগুলো থেকে যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন।

কক্সবাজার সতর্কতা এবং ভ্রমণ টিপস:

কক্সবাজার ভ্রমণের সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা এবং কিছু টিপস মেনে চলা আপনার ভ্রমণকে আরও নিরাপদ ও আনন্দময় করে তুলবে।

সাধারণ সতর্কতা:

১. সমুদ্রে গোসল:

* লাল পতাকা: সমুদ্রে লাল পতাকা দেখলে গোসল করা থেকে বিরত থাকুন। এর অর্থ হলো সমুদ্র উত্তাল এবং সাঁতার কাটার জন্য বিপজ্জনক।

* জোয়ার-ভাটা: জোয়ার-ভাটার সময় সম্পর্কে জেনে নিন। ভাটার সময় সমুদ্রের টান বাড়ে, যা বিপজ্জনক হতে পারে। স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য জেনে নিন।

* গভীরতা: গভীর জলে যাবেন না। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন এবং কোমর পর্যন্ত জলে থাকুন।

* অপরিচিতদের সাথে: অপরিচিতদের সাথে সমুদ্রে নামা থেকে বিরত থাকুন।

* শিশুদের নিরাপত্তা: শিশুদের দিকে সর্বক্ষণ নজর রাখুন। তাদের একা সমুদ্রে যেতে দেবেন না।

২. ব্যক্তিগত নিরাপত্তা:

* মূল্যবান জিনিসপত্র: ভিড়ের জায়গায় মূল্যবান জিনিসপত্র (টাকা, মোবাইল, গয়না) সাবধানে রাখুন। মানিব্যাগ বা মোবাইল প্যান্টের পেছনের পকেটে রাখবেন না।

* অপরিচিত প্রস্তাব: অপরিচিত কারো সাথে ঘনিষ্ঠ হবেন না বা তাদের কাছ থেকে কোনো খাবার/পানীয় গ্রহণ করবেন না।

* রাতের বেলা সৈকত: গভীর রাতে নির্জন সৈকতে একা যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

* ছবি তোলা: স্থানীয় নারী ও শিশুদের ছবি তোলার আগে অনুমতি নিন।

৩. স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা:

* রোদ: রোদের তীব্রতা থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিন, টুপি, সানগ্লাস ব্যবহার করুন। দিনের বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলুন।

* পানি পান: পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করুন, যাতে শরীর পানিশূন্য না হয়।

* খাবার: খোলা বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার এড়িয়ে চলুন। তাজা এবং ভালোভাবে রান্না করা খাবার খান।

* প্রাথমিক চিকিৎসা: ছোটখাটো আঘাত বা অসুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম (ব্যান্ডেজ, ব্যথানাশক, অ্যান্টিসেপটিক) সাথে রাখুন।

৪. পরিবেশ সচেতনতা:

* পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না। সৈকত ও অন্যান্য পর্যটন স্থান পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করুন।

* প্রবাল ধ্বংস: যদি সেন্ট মার্টিনস বা এমন কোনো প্রবাল দ্বীপে যান, তবে প্রবাল স্পর্শ করা বা ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকুন।

ভ্রমণ টিপস:

১. যাতায়াত:

* বাস/ট্রেন টিকেট: ছুটির দিনে বা পিক সিজনে গেলে যাতায়াতের টিকেট ও হোটেলের বুকিং আগে থেকে করে রাখুন।

* স্থানীয় পরিবহন: সিএনজি, ইজিবাইক বা রিক্সায় ওঠার আগে ভাড়া দরদাম করে নিন।

২. আবাসন:

* হোটেল বুকিং: অনলাইনে রিভিউ দেখে এবং নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম থেকে হোটেল বুক করুন। সরাসরি হোটেলে গিয়েও রুম দেখতে পারেন।

* চেক-ইন/চেক-আউট: হোটেল চেক-ইন ও চেক-আউটের সময় জেনে নিন।

৩. খাবার:

* সি-ফুড: তাজা সি-ফুড খাওয়ার চেষ্টা করুন। যে রেস্টুরেন্ট বা দোকান থেকে খাবার কিনছেন, তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খেয়াল করুন।

* বার্মিজ মার্কেট: বার্মিজ মার্কেট থেকে কেনাকাটার সময় দরদাম করুন।

* ক্যাফে ও রেস্টুরেন্ট: হোটেলের কাছাকাছি ভালো রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে খোঁজ নিন।

৪. সাধারণ প্রস্তুতি:

* পাওয়ার ব্যাংক: ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট চার্জ করার জন্য পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখুন।

* স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ: প্রয়োজনে স্থানীয়দের সাথে বিনয়ের সাথে কথা বলুন এবং তাদের সাহায্য নিন।

এই সতর্কতা ও টিপসগুলো মেনে চললে কক্সবাজারের সৌন্দর্য আপনি ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন।

কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান সমূহ:

কক্সবাজার শুধুমাত্র বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক বালুকাময় সমুদ্রসৈকতের জন্যই বিখ্যাত নয়, এর আশেপাশেও রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। নিচে কক্সবাজারের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো:

১. কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত (Cox’s Bazar Sea Beach):

  • বিশেষত্ব: এটি বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক বালুকাময় সমুদ্র সৈকত, প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ।
  • আকর্ষণ: সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, ঢেউয়ের গর্জন, সৈকতে হেঁটে বেড়ানো, ঘোড়ায় চড়া, বিচ বাইকিং এবং ওয়াটার স্পোর্টসের সুযোগ। সৈকতের বিভিন্ন অংশ যেমন লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলী পয়েন্ট পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।

২. ইনানী বিচ (Inani Beach):

  • অবস্থান: কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।
  • বিশেষত্ব: এর স্বচ্ছ ফিরোজা রঙের জল এবং অসংখ্য প্রবাল পাথরের জন্য এটি বিখ্যাত। ভাটার সময় এই পাথরগুলো ভেসে ওঠে।
  • আকর্ষণ: শান্ত পরিবেশ, সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য, ছবি তোলার জন্য চমৎকার জায়গা। মেরিন ড্রাইভ ধরে এখানে পৌঁছানো একটি বাড়তি আকর্ষণ।

৩. হিমছড়ি (Himchori):

  • অবস্থান: কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত, মেরিন ড্রাইভের পাশেই।
  • বিশেষত্ব: এখানে ছোট ছোট পাহাড়ি ঝর্ণা (শুকনো মৌসুমে জলপ্রবাহ কম থাকে) এবং সবুজ পাহাড় রয়েছে।
  • আকর্ষণ: পাহাড়ে আরোহণ করে চারপাশের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা, ঝর্ণার পাশে ছবি তোলা।

৪. মেরিন ড্রাইভ (Marine Drive Road):

  • অবস্থান: কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত, যা সমুদ্রের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে।
  • বিশেষত্ব: এটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর সড়ক। একদিকে বিশাল বঙ্গোপসাগর আর অন্যদিকে সবুজ পাহাড়ের অপূর্ব মেলবন্ধন।
  • আকর্ষণ: এই রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা, বিশেষ করে সূর্যাস্তের সময়।

৫. ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক (Dulahazra Safari Park):

  • অবস্থান: কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
  • বিশেষত্ব: এটি বাংলাদেশের প্রথম সাফারি পার্ক। এখানে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী (যেমন – হরিণ, হাতি, বানর, বাঘ, ভাল্লুক, জেব্রা) তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে বিচরণ করে।
  • আকর্ষণ: ওয়াকওয়ে ধরে প্রাণীদের দেখা এবং প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো।

৬. মহেশখালী দ্বীপ (Maheshkhali Island):

  • অবস্থান: কক্সবাজারের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত একটি দ্বীপ। স্পিডবোট বা ট্রলারে করে এখানে যাওয়া যায়।
  • বিশেষত্ব: এই দ্বীপে ঐতিহাসিক আদিনাথ মন্দির (পাহাড়ের উপরে অবস্থিত), বৌদ্ধ মন্দির এবং লবণ উৎপাদন ক্ষেত্র রয়েছে।
  • আকর্ষণ: দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা, স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা দেখা, এবং মন্দিরে পরিদর্শন।

৭. সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ (Saint Martin’s Island):

  • অবস্থান: কক্সবাজার থেকে কিছুটা দূরে হলেও, অনেক পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণের সময় সেন্ট মার্টিনস দ্বীপেও যান। টেকনাফ থেকে জাহাজ বা ট্রলারে করে সেন্ট মার্টিনস যাওয়া যায়।
  • বিশেষত্ব: এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যেখানে প্রচুর কোরাল এবং পরিষ্কার নীল জল রয়েছে।
  • আকর্ষণ: স্কুবা ডাইভিং, স্নরকেলিং, কাঁচের মতো স্বচ্ছ জলে সাঁতার কাটা, ছেঁড়াদ্বীপ ভ্রমণ।

৮. বার্মিজ মার্কেট (Burmese Market):

  • অবস্থান: কক্সবাজার শহরের মধ্যেই অবস্থিত।
  • বিশেষত্ব: এখানে মিয়ানমার (বার্মা), চীন, থাইল্যান্ড এবং স্থানীয়ভাবে তৈরি বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায়।
  • আকর্ষণ: আচার, শুঁটকি, হাতে তৈরি কাপড়, গহনা, স্যুভেনিয়ার এবং অন্যান্য উপহার সামগ্রী কেনাকাটা।

৯. রামুর বৌদ্ধ বিহার (Ramu Buddhist Temple):

  • অবস্থান: কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
  • বিশেষত্ব: এখানে বেশ কয়েকটি প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির এবং বড় বুদ্ধ মূর্তি রয়েছে।
  • আকর্ষণ: বৌদ্ধ ধর্মীয় স্থাপত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা।

১০. আদিনাথ মন্দির (Adinath Temple):

  • অবস্থান: মহেশখালী দ্বীপের গোরকঘাটা ইউনিয়নের ঠাকুরতলা গ্রামের মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত।
  • বিশেষত্ব: এটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি পবিত্র তীর্থস্থান, যেখানে ভগবান শিবের পূজা করা হয়।
  • আকর্ষণ: মন্দির পরিদর্শন এবং পাহাড়ের উপর থেকে চারপাশের দৃশ্য উপভোগ করা।

এই স্থানগুলো আপনার কক্সবাজার ভ্রমণকে আরও বৈচিত্র্যময় এবং স্মরণীয় করে তুলবে।

here are some links related to Cox’s Bazar, covering travel information, accommodation, and general tourism. Please note that website content can change over time.

General Tourism & Information:

  • Bangladesh Parjatan Corporation (National Tourism Organization):
    • While not specific to Cox’s Bazar, their main website often has general information about tourist spots in Bangladesh. You might need to navigate their site.
    • http://www.parjatan.gov.bd/ (This is the official website for Bangladesh Tourism. You may need to search within their site for Cox’s Bazar specifics.)
  • Wikipedia – Cox’s Bazar:

Accommodation (Booking Sites):

These sites allow you to search for and book hotels, resorts, and guesthouses in Cox’s Bazar.1 You can filter by price, rating, amenities, and location.

Flight Information (Airlines serving Cox’s Bazar):

You can visit the official websites of these airlines to check flight schedules and book tickets from Dhaka or other major cities to Cox’s Bazar.

Train Information:

For train travel to Cox’s Bazar, check the Bangladesh Railway website or an online ticketing platform.

Bus Information:

For bus tickets, you can check the websites of major bus operators or online booking platforms.

  • Shohoz.com (Bus Tickets):
  • Bus operators like Green Line, S. Alam, Soudia, Hanif, etc., also have their own websites, but Shohoz or similar platforms aggregate many options.

Please note: For real-time updates on travel restrictions, local conditions, or specific opening hours of attractions, it’s always best to check the most current information closer to your travel date or contact local authorities/tour operators directly.

beluchistan

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *