ধর্ম

ইসলামে ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করা বা অন্য ধর্মগ্রন্থ পড়া নিষিদ্ধ।

প্রত্যক্ষ উত্তর

  • কগনিটিভ বায়াস মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ইসলামে ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করা বা অন্য ধর্মগ্রন্থ পড়া নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়।
  • পারিবারিক পরিবেশ এবং সংস্কৃতি মানুষকে তাদের পৈত্রিক ধর্মে আটকে রাখে।

পারিবারিক প্রভাব এবং ধর্মীয় পরিচয়

ইসলামে, একটি শিশু তার বাবা-মায়ের ধর্ম অনুসরণ করে। যদি উভয় মুসলিম হয়, তাহলে শিশুটি মুসলিম হিসেবে বিবেচিত হয়। যদি একজন মুসলিম হয়, তাহলে শিশুটি সেই মুসলিম অভিভাবকের ধর্ম অনুসরণ করে। এটি ইসলামী পণ্ডিতদের সম্মতি লাভ করেছে, যেমন A small child follows the religion of whichever of his parents is Muslim উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রভাব ছোটবেলার শিক্ষা এবং সামাজিক পরিবেশের মাধ্যমে আরও দৃঢ় হয়।

ইসলামে প্রশ্ন ও সন্দেহ

ইসলামে ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করা বা সন্দেহ পোষণ করা নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়। কুরআনে (সূরা আল-মায়িদাহ, ৫:৫১) বলা হয়েছে, “হে মুমিনগণ, ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।” হাদিসেও উল্লেখ আছে যে, ধর্মের বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করা পাপ (সুনান আবু দাউদ)। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, ঈমান হচ্ছে আল্লাহ এবং তার রাসূলের শিক্ষাকে অন্ধভাবে মেনে নেয়া।

অন্য ধর্মগ্রন্থ পড়ার নিষেধ

ইসলামে অন্য ধর্মের ধর্মগ্রন্থ পড়া সাধারণ মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ, যেহেতু এটি সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে। শুধুমাত্র আলেমরা এই ধর্মগ্রন্থ পড়তে পারেন, এবং তাও শুধুমাত্র অন্য ধর্মের ভুল ধারণাগুলো প্রত্যাখ্যান করতে। আব্দুল আজিজ ইবনে বাযের একটি ফতোয়ায় বলা হয়েছে, “মুসলমানদের জন্য তাওরাত, ইনজীল পড়া উচিত নয়” (Reading scriptures of other religions অনুরূপ উৎস)।

ইসলাম
ইসলামে, একটি শিশু তার বাবা-মায়ের ধর্ম অনুসরণ করে। যদি উভয় মুসলিম হয়, তাহলে শিশুটি মুসলিম হিসেবে বিবেচিত হয়। যদি একজন মুসলিম হয়, তাহলে শিশুটি সেই মুসলিম অভিভাবকের ধর্ম অনুসরণ করে।

বিস্তারিত বিশ্লেষণ নোট

ভূমিকা এবং কগনিটিভ বায়াসের ধারণা

কগনিটিভ বায়াস হলো মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় একটি পদ্ধতিগত ভুল, যা তার আবেগ, পূর্ববর্তী বিশ্বাস, পৈত্রিক ধর্ম এবং বাল্যকালীন সংস্কারের প্রভাবে গঠিত হয়। এটি মানুষকে তাদের বিশ্বাসের সাথে মিলে যাওয়া তথ্য গ্রহণ করতে এবং বিরোধী তথ্য উপেক্ষা করতে উৎসাহিত করে। বিশেষত, ‘কনফার্মেশন বায়াস’ মানুষকে তাদের পূর্ববর্তী ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য খোঁজার দিকে ঠেলে দেয়। বিজ্ঞানীগণ বলেন, মানুষের মস্তিষ্ক একটি প্যাটার্ন-স্বীকৃতি যন্ত্রের মত কাজ করে, যেখানে মেঘের আকৃতিতে ঘোড়া বা হাতি দেখা হলেও, বাস্তবিকতা সে আকৃতি হতে পারে না। এইভাবে, মস্তিষ্ক স্মৃতি ও বিশ্বাসকে পুনরাবৃত্তি করে, যা আনন্দ বা স্বস্তি দেয়।

সাম্প্রতিক সময়ে, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী—মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদি বা বৌদ্ধ—দাবি করেন যে, তারা নিজেদের পৈত্রিক ধর্মে জন্ম নেওয়ার পর গবেষণা ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সেই ধর্মের সত্যতা উপলব্ধি করেছে। তবে, আশ্চর্যজনকভাবে, অধিকাংশ মানুষই তাদের পূর্ববর্তী ধর্মের প্রতি আস্থা জোরদার করে, যা কগনিটিভ বায়াসের প্রভাবে বোঝানো যায়।

পারিবারিক ধর্ম এবং এর প্রভাব

ইসলামে, শিশুর ধর্মীয় পরিচয় তার অভিভাবকদের ধর্মের ওপর নির্ভর করে। যদি উভয় মুসলিম হয়, তাহলে শিশুটি মুসলিম হিসেবে বিবেচিত হয়। যদি একজন মুসলিম হয়, তাহলে শিশুটি সেই মুসলিম অভিভাবকের ধর্ম অনুসরণ করে। এটি ইসলামী পণ্ডিতদের সম্মতি লাভ করেছে, যেমন A small child follows the religion of whichever of his parents is Muslim উল্লেখ করা হয়েছে। এই নিয়মটি হাদিসে সমর্থিত, যেখানে বলা হয়েছে, “শিশুটি তার বাবা-দাদার ধর্ম অনুসরণ করবে।” (মিশকাতুল মাসাবীহ) এছাড়াও, একটি হাদিসে (সহীহ মুসলিম) বলা হয়েছে, “প্রতিটি শিশু ফিতরাহ (প্রাকৃতিক অবস্থা) নিয়ে জন্ম নেয়, তারপর তার অভিভাবকরা তাকে ইহুদি, খ্রিস্টান বা জোরাস্ট্রিয়ান করে তোলে।” এটি ইঙ্গিত দেয় যে, শিশুর ধর্মীয় পরিচয় প্রাথমিকভাবে তার পরিবারের প্রভাবে গঠিত হয়।

ছোটবেলার শিক্ষা এবং সামাজিক পরিবেশ এই বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে একটি মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলে, আশপাশের সবাই ইসলামের সত্যতা সম্পর্কে বলবে, আর ভারতে হিন্দু পরিবারে জন্ম নিলে হিন্দুধর্মের প্রাচীনত্ব ও সত্যতা প্রচারিত হয়। এই প্রভাব মিডিয়া, স্কুল এবং সংস্কৃতির মাধ্যমেও প্রকাশ পায়, যা মানুষকে তাদের পৈত্রিক ধর্মে আটকে রাখে।

ইসলামে ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন ও সন্দেহ

ইসলামে ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করা বা সন্দেহ পোষণ করা নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়। কুরআনে (সূরা আল-মায়িদাহ, ৫:৫১) বলা হয়েছে, “হে মুমিনগণ, ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়াত দেন না।” এটি ইঙ্গিত দেয় যে, অন্য ধর্মের প্রভাব থেকে দূরে থাকা জরুরি।

হাদিসেও এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ আছে। উদাহরণস্বরূপ, সুনান আবু দাউদে উল্লেখ আছে, “কুরআন সম্বন্ধে সন্দেহ পোষণ করা কুফরী।” (হাদিস নম্বর ৪৬০৩) অন্য একটি হাদিসে (সহীহ বুখারী) বলা হয়েছে, “তোমাদের কারো নিকট শয়তান আসতে পারে এবং সে বলতে পারে, এ বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? এরূপ প্রশ্ন করতে করতে শেষ পর্যন্ত বলে বসবে, তোমার প্রতিপালককে কে সৃষ্টি করেছে? যখন ব্যাপারটি এ স্তরে পৌঁছে যাবে, তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায় এবং বিরত হয়ে যায়।” এটি ইঙ্গিত দেয় যে, ধর্মীয় প্রশ্নগুলো শয়তানের প্রলোভন হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এটি এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

ইমাম আবু হানীফা এবং অন্যান্য মুজতাহিদ ইমামরা ইলমুল কালাম (দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা ভিত্তিক ধর্মতাত্ত্বিক আলোচনা) চর্চাকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, “কালাম বা দর্শনভিত্তিক বিতর্কে আমার পারদর্শিতা ছিল … আমি দেখলাম যে, কালাম চর্চায় লিপ্ত মানুষগুলোর প্রকৃতি ও প্রকাশ নেককার মানুষদের মত নয়। তাদের হৃদয়গুলো কঠিন, মন ও প্রকৃতি কর্কশ এবং তারা কুরআন ও সুন্নাতের বিরোধিতা করার বিষয়ে বেপরোয়া।” (শারহুল আক্বীদা আত-ত্বহাবীয়া) এটি ইঙ্গিত দেয় যে, যুক্তি বা দর্শনের মাধ্যমে ধর্মীয় বিশ্বাস পরীক্ষা করা ঈমানের জন্য ক্ষতিকর।

অন্য ধর্মগ্রন্থ পড়ার বিধান

ইসলামে অন্য ধর্মের ধর্মগ্রন্থ পড়া সাধারণ মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ, যেহেতু এটি সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে। শুধুমাত্র আলেমরা এই ধর্মগ্রন্থ পড়তে পারেন, এবং তাও শুধুমাত্র অন্য ধর্মের ভুল ধারণাগুলো প্রত্যাখ্যান করতে বা ইসলামের সত্যতা প্রমাণ করতে। আব্দুল আজিজ ইবনে বাযের একটি ফতোয়ায় বলা হয়েছে, “মুসলমানদের জন্য তাওরাত, ইনজীল বা অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থ পড়া উচিত নয়, কারণ এটি সন্দেহ ও শংকা সৃষ্টি করতে পারে।” (Reading scriptures of other religions অনুরূপ উৎস) এই ফতোয়া ইসলামী ঐতিহ্যের সাথে সমর্থন লাভ করে, যেখানে অন্য ধর্মের শিক্ষাগুলো মূলত বিকৃত বা অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে করা হয়।

এই নিষেধের পেছনে যুক্তি হলো, অন্য ধর্মের শাস্ত্র পড়লে মুসলমানদের ঈমান দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি হাদিসে (হাদীস সম্ভার) উল্লেখ আছে, “উমার (রাঃ) তাওরাতের কয়েকটি পাতা পড়ছিলেন, তা দেখে নবী (সা.) রাগান্বিত হয়ে বললেন, ‘আমার ব্যাপারে কি কোন সন্দেহ আছে হে ইবনে খাত্ত্বাব? আমি কি শুভ্র ও নির্মল শরীয়ত নিয়ে আগমন করিনি?’” এটি ইঙ্গিত দেয় যে, অন্য ধর্মের শাস্ত্র পড়া মুসলমানদের জন্য অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর।

জ্ঞানের উদ্দেশ্য এবং ইসলাম

ইসলামে জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা। হাদিসে উল্লেখ আছে, “যে বিদ্যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা যদি কেউ শুধুমাত্র পার্থিব স্বার্থ লাভের জন্য অর্জন করে, তাহলে সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুগন্ধটুকুও পাবে না।” (সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিস নম্বর ৩/২৫২) এটি ইঙ্গিত দেয় যে, জ্ঞান—বিশেষত ধর্মীয় জ্ঞান—কখনো পার্থিব লাভের জন্য ব্যবহৃত হওয়া উচিত নয়। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে, জ্ঞান আল্লাহর পথ অনুসরণ এবং তার সন্তুষ্টি লাভের জন্য।

কগনিটিভ বায়াস এবং ধর্মীয় অনুগততা

কগনিটিভ বায়াস, বিশেষত কনফার্মেশন বায়াস, মানুষকে তাদের পৈত্রিক ধর্মের প্রতি অনুগত থাকতে উৎসাহিত করে। এই বায়াসের কারণে, লোকেরা প্রায়ই তাদের ধর্মকে সত্য বলে গ্রহণ করে এবং অন্য ধর্মগুলোকে মিথ্যা বলে মনে করে। ইসলামেও এই প্রবণতা দেখা যায়, যেখানে মুসলমানরা প্রায়ই বলেন যে, তারা ইসলামের সত্যতা নিয়ে গবেষণা করে এবং অন্য ধর্মগুলোর সাথে তুলনা করে এসেছে। কিন্তু বাস্তবে, এই “গবেষণা” প্রায়ই তাদের পূর্ববর্তী বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং তাদের ইসলামের প্রতি অনুগততাকে আরও দৃঢ় করে।

উদাহরণস্বরূপ, একজন মুসলমান যখন অন্য ধর্মের শাস্ত্র পড়তে চায়, তখন তাকে নিষেধ করা হয়, কারণ এটি সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে। এই নিষেধ কগনিটিভ বায়াসকে আরও দৃঢ় করে, যেহেতু মুসলমানরা শুধুমাত্র ইসলামী উৎস থেকে তথ্য গ্রহণ করে এবং অন্যান্য উৎস উপেক্ষা করে।

তুলনামূলক দৃষ্টিকোণ

এই প্রবণতা শুধুমাত্র ইসলামে সীমাবদ্ধ নয়। হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদি বা বৌদ্ধরাও প্রায়ই বলেন যে, তারা নিজেদের ধর্মের সত্যতা নিয়ে গবেষণা করে এসেছে, কিন্তু তাদের গবেষণা প্রায়ই তাদের পৈত্রিক ধর্মের প্রতি আস্থা জোরদার করে। এটি কগনিটিভ বায়াসের একটি সার্বজনীন প্রভাব, যা মানুষকে তাদের পরিবেশ এবং সংস্কৃতির মধ্যে আটকে রাখে।

উপসংহার

কগনিটিভ বায়াস মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইসলামে, এই বায়াসকে আরও দৃঢ় করার জন্য ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করা, অন্য ধর্মগ্রন্থ পড়া এবং জ্ঞানকে পার্থিব লাভের জন্য ব্যবহার করা—এই সবকিছুই নিষিদ্ধ। ইসলামী শিক্ষা অনুসারে, ঈমান হচ্ছে আল্লাহ এবং তার রাসূলের শিক্ষাকে অন্ধভাবে মেনে নেয়া। এই দৃষ্টিভঙ্গি মানুষকে তাদের পৈত্রিক ধর্মের প্রতি অনুগত থাকতে উৎসাহিত করে, কিন্তু একইসাথে এটি চিন্তাশক্তির উপর নির্ভরশীল স্বাধীন চিন্তাকেও সীমাবদ্ধ করে।


মূল উদ্ধৃতি

you can also read more kazi nazrul islam

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *